হিজাব বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনায় এক বিক্ষোভকারীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। ইরানে এই ঘটনার মাধ্যমে আন্দোলনের কঠোর দমন এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের নতুন মাত্রা এসেছে।
ফাঁসির ঘটনা ও অভিযোগ
ইরানের বিচার বিভাগীয় ওয়েবসাইট মিজান জানিয়েছে, মেহরান বাহরামিয়ান নামের ওই বিক্ষোভকারীকে আজ সকালে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি ইসফাহান প্রদেশের সেমিরোম এলাকায় পুলিশের গাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং কয়েকজন আহত হন।
ইরানের কর্তৃপক্ষের মতে, বাহরামিয়ানকে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ইরানে চলমান হিজাব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আলোচিত অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
পূর্বপ্রেক্ষাপট
২০২২ সালে ইরানের তরুণী মাহসা আমিনি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। তার বিরুদ্ধে হিজাব পরিধান বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
মিজান সূত্রে জানা গেছে, বাহরামিয়ান ছাড়াও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। তার ভাই ফাজেলকেও একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাহরামিয়ানের আরেক ভাই মোরাদ ২০২২ সালে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইরানের এই কর্মকাণ্ডকে নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাগুলো বলছে, ইরান সরকার প্রায়ই আহত ও বন্দি ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন, দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে বন্দি রাখা এবং পরিবারকে হুমকি দেয়। এই স্বীকারোক্তি আদালতে প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ও আদালত আন্দোলন দমন এবং পুলিশের প্রতি আক্রমণে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে হিজাব বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ফাঁসির ঘটনায় জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয় এবং আন্দোলনের গতি সাময়িকভাবে কমতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এমন কঠোর পদক্ষেপ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়াতে পারে।
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, অপ্রত্যাশিত মৃত্যুদণ্ড এবং আন্দোলন দমন সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সরকারের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নজরে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশের নৈতিকতা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া কর্মকাণ্ড এবং আদালতের রায় সমন্বিত হতে হবে।
একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী বলেছেন, “অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের নীতি কার্যকর হলেও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। এটি দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।”
সংক্ষিপ্তসার
ইরানের হিজাব বিরোধী আন্দোলনের এই নতুন পর্ব দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও, ইরান সরকারের পদক্ষেপ আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে। আগামী দিনে পরিস্থিতি কেমন মোড় নেবে তা আন্তর্জাতিক সমাজ ও ইরানের ভেতরকার রাজনৈতিক পরিবর্তনের উপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১২০৯, Signalbd.com
				
					


