আঞ্চলিক

তুলে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে নারীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার চালক

Advertisement

চাঁদপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন চালক। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আক্রান্ত নারীর পরিবার। ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

ঘটনাস্থল ও গ্রেপ্তার

শনিবার চাঁদপুর সদর মডেল থানার পুলিশ এক অভিযানে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মুরাদ হোসেন (৩৭)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এবং তার সহযোগীরা শুক্রবার রাত সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজগাছতলা এলাকায় ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।

ওসি মো. বাহার মিয়া জানান, পুলিশ টহলরত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দেখে সন্দেহজনক মনে হয়। পরে তল্লাশি চালিয়ে নারীকে উদ্ধার করা হয় এবং চালককে আটক করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার

ঘটনার শিকার নারী চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন এবং স্বামী পরিত্যক্তা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি মাঝে মধ্যে অজান্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে পরিবারের অজান্তে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খুঁজে পেয়েও তাকে পাননি।

পরিবারের ছোট বোনজামাতা সদর মডেল থানায় চালক সহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার মাধ্যমে তারা ন্যায় বিচার দাবি করেছেন।

অভিযুক্ত চালকের পটভূমি

মুরাদ হোসেন চাঁদপুর শহরের প্রফেসর পাড়া ৯নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি পূর্বেও হাসপাতালের রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে না নিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো অসৌজন্যমূলক কাজ করেছেন।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, মুরাদের এমন কর্মকাণ্ড নতুন নয়। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারী ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে তার আচরণও প্রায় সময় সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

পুলিশি প্রতিক্রিয়া

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. বাহার মিয়া বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রায় সময় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত। চালক মুরাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ডে ঘুরাঘুরি অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে আসে এবং ঘটনার সময় ধরা পড়ে।”

পুলিশি তদন্ত এখনও চলছে। সন্দেহভাজন অন্যান্য সহযোগীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

স্থানীয় মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিকভাবে অসহায় ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন ঘটনায় তাদের প্রতি বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

একটি স্থানীয় সামাজিক কর্মী বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিরা সহজেই অপরাধের শিকার হতে পারেন। তাদের জন্য সরকারি পর্যায়ে বিশেষ নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা জরুরি।”

মানবাধিকার ও আইনি দিক

আইন অনুযায়ী মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির উপর হওয়া নির্যাতন এবং ধর্ষণ অপরাধ হিসেবে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিলে পুনরায় এমন ঘটনা ঘটানো কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া যথেষ্ট নয়, সামাজিক সচেতনতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

চাঁদপুরের এই ঘটনায় সামাজিক, আইনি ও মানবিক দিক থেকে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। মানসিকভাবে অসহায় ব্যক্তিদের সুরক্ষা, অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত তদারকি সবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে কীভাবে এমন ঘটনায় পুনরায় প্রতিরোধ করা যায়, তা এখন সরকারের, পুলিশের এবং সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করছে।

এম আর এম – ১২০৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button