
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দীর্ঘ বিরতির পর জনসম্মুখে দেখা গেছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের একটি গির্জায় উপস্থিত হন তিনি। এ সময় তার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখা যায়, যা জনমনে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। উপস্থিতদের সাথে তিনি কুশল বিনিময় করেন এবং সাধারণ ভক্তদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন।
কেন মাথায় ব্যান্ডেজ?
বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সম্প্রতি তার মাথায় ক্যান্সারজনিত ত্বক কোষ অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার মাথার ডান পাশের ক্যান্সারাক্রান্ত অংশ ধাপে ধাপে কেটে অপসারণ করেছেন। এই অস্ত্রোপচারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে “মোহস সার্জারি” বলা হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে প্রতিটি ধাপে আক্রান্ত কোষ অপসারণ করে পরীক্ষা করা হয়, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় ক্যান্সার পুরোপুরি দূর হয়েছে।
অতীতের স্বাস্থ্য ইতিহাস
জো বাইডেনের আগে থেকেই ত্বকের ক্যান্সারের সমস্যা ছিল। ২০২৩ সালে তার বুকে ক্যান্সারাক্রান্ত একটি ক্ষত অপসারণ করা হয়েছিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়। এরও আগে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে তার শরীর থেকে কয়েক দফায় ক্যান্সার কোষ অপসারণ করা হয়। এই দীর্ঘ লড়াই বাইডেনকে সবসময়ই সতর্ক ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রেখেছে।
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
বাইডেনকে ব্যান্ডেজসহ জনসম্মুখে দেখে মার্কিন ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই তার সাহস ও মানসিক শক্তির প্রশংসা করেছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, তার বয়স (৮২ বছর) এবং ক্রমাগত স্বাস্থ্য সমস্যা রাজনৈতিকভাবে তার ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করছে। বিশেষ করে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসায় এই উপস্থিতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চিকিৎসকদের মন্তব্য
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাইডেনের অস্ত্রোপচারটি সফল হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে তার বয়স বিবেচনায় তাকে নিয়মিত চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোহস সার্জারি সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বয়সের কারণে সেরে উঠতে সময় বেশি লাগতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাব
জো বাইডেনের সাম্প্রতিক জনসম্মুখে আগমনকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন জনসভা ও প্রচারণা এড়িয়ে চলার পর তার এ উপস্থিতি অনেকের কাছে ইতিবাচক সংকেত। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ভবিষ্যতে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারবেন কি না। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে তাই বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বাইডেন দম্পতির সংগ্রাম
জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার সচেতনতা ও চিকিৎসা প্রচারণার সাথে জড়িত। তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ক্যান্সার গবেষণায় সহায়তা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং রোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তারা। ফলে তার এই সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচার বিষয়টিকে আরও আলোচনায় এনেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই খবর শিরোনামে এসেছে। বিশেষ করে তার নেতৃত্বে অতীতের বৈশ্বিক ভূমিকা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের জনসম্মুখে ব্যান্ডেজসহ উপস্থিতি একদিকে তার স্বচ্ছতা ও সাহসকে তুলে ধরছে, অন্যদিকে এটি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য আলোচনার সুযোগ তৈরি করছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে স্বাস্থ্যগত প্রশ্ন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, আর বাইডেনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।
জো বাইডেনের মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে দীর্ঘদিন পর জনসম্মুখে আসা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখন দেখার বিষয়, এই স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি কীভাবে নিজের রাজনৈতিক পথচলা অব্যাহত রাখেন।
এম আর এম – ১২০০, Signalbd.com