আঞ্চলিক

‘তোমরা হাতাহাতি করবা আর ভোট করে দিবো আমি, মামার বাড়ির আবদার’

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ-ভিত্তিক রাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা তালা দিবা, তোমরা হাতাহাতি করবা, আর তোমাদের ইলেকশন আমাকে করে দিতে হবে। মামার বাড়ির আবদার।’ এই মন্তব্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, ছাত্ররা যদি ছাত্রসুলভ আচরণ না প্রদর্শন করে, তবে তারা নিজেই রাকসু নির্বাচনে অযোগ্য প্রমাণ করছে। তিনি সতর্ক করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অস্থিরতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিত

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সকলের দায়িত্বশীল আচরণ অপরিহার্য।

রাকসু নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য দায়িত্বশীলদের প্রশংসা করে উপাচার্য বলেন, যারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের উচ্চ নৈতিকতা ও আত্মসম্মানবোধে কোনও কমতি নেই।

রাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপট

রাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গত রোববার সকাল ৯টা থেকে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে কার্যালয়ের একটি চেয়ার ভাঙচুর ও একটি টেবিল উল্টে দিয়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে ছাত্রদলের কিছু কর্মী তাদের ঘিরে ধরেন। পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে আসেন। এতে কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা দুইটার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়।

উপাচার্যের দৃষ্টিভঙ্গি

উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও ড্রাস্টিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্ররা নিজ দায়িত্ব পালন করলে, বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণভাবে চলতে পারবে। তিনি বলেন, “আমি নিজে খুশি হতাম, যদি নির্বাচন সম্পূর্ণ আমাদের সামর্থ্য ও আন্তরিকতার মাধ্যমে হয়। কিন্তু এখানে অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয়।”

উপাচার্য মনে করিয়ে দেন, যদি সেনাবাহিনী পর্যন্ত নির্বাচনে জড়িত হয়, তাহলে এটি ছাত্র সমাজের জন্য কষ্টকর হতে পারে। তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলেন, তাদের আচরণই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ্যতার পরিচয় দেয়।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

উল্লেখযোগ্য অংশের শিক্ষার্থী এই মন্তব্যকে উদ্বেগজনক বলছেন। তারা মনে করছেন, এমন মন্তব্য শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণের সুযোগকে সীমিত করতে পারে। তবে কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, উপাচার্যের মন্তব্য শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সতর্কবার্তা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংহতি এবং সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে রাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।

রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রভাব

রাবি উপাচার্যের এই মন্তব্য ছাত্র রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি শুধুমাত্র নির্বাচনের প্রেক্ষাপটকেই প্রভাবিত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশেও প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যদি দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্যায় ও অশান্তি দেখা দিতে পারে। তাই সকল পক্ষের জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা ও সংযম বজায় রাখা।

সমাপ্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচনের আগে উপাচার্যের বিতর্কিত মন্তব্য শিক্ষার্থী ও জনমতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই বিতর্কময় পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবে এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় রাখবে।

এম আর এম – ১১৯৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button