চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মামুন মিয়া সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছেন। মাথায় জটিল অস্ত্রোপচারের পর তার খুলি অপসারণ করা হয়েছে এবং তা আপাতত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ব্যান্ডেজে লেখা হয়েছে—‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’। বর্তমানে তিনি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ঘটনায় বিস্তারিত
গত ৩১ আগস্ট রাতে চবির একটি ছাত্রীর বাসার গেট খোলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বিষয়টি ধীরে ধীরে সংঘর্ষে পরিণত হয়। সংঘর্ষে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। মামুন মিয়ার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে তার ব্রেনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কানের পর্দা ছিঁড়ে যায়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশনের সময় তার মাথা থেকে মোট ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে। এই খুলি সংরক্ষণ করা হয়েছে ফ্রিজে, এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুকূলে এলে খুলি পুনরায় মাথায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
চিকিৎসা ও বর্তমান অবস্থা
মামুন টানা চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল এবং তিনি পার্কভিউ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা আশা করছেন এক থেকে দুই মাসের মধ্যে—or পরিস্থিতি অনুকূলে এলে—খুলি পুনঃপ্রতিস্থাপন সম্ভব হবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশন প্রায় চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে। সামগ্রিকভাবে তার স্বাস্থ্য ক্রমশ উন্নতি করছে এবং জ্ঞান ফিরছে।
অন্যান্য শিক্ষার্থীর অবস্থার বিবরণ
একই সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক ছিল। তার জ্ঞানের মাত্রা একসময় ৩-এ নেমে গিয়েছিল, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ১৫ থাকার কথা। বর্তমানে মেডিক্যাল বোর্ড তার জন্য নতুন অপারেশনের বিষয়ে আলোচনা করছে।
ইসলামের স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামের ডান হাতের রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট
সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে একটি ছাত্রীর বাসার গেট খোলা-বন্ধ সংক্রান্ত বাকবিতণ্ডা ধরা হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
মামুনের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় ধারালো রামদা ও চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা বলছেন, “মানুষ হয়েও কেউ কিভাবে অন্য মানুষের সঙ্গে এমন নৃশংস আচরণ করতে পারে?”
প্রতিক্রিয়া
চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মামুনের অপারেশন সফল হয়েছে। তিনি সুস্থ হলে দুই মাসের মধ্যে খুলি পুনঃপ্রতিস্থাপন করা হবে।
ফেসবুকে মামুনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান লিখেছেন, “যে মস্তিষ্কে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়ার বুনন ছিল, আজ সেই মস্তিষ্ক হাড়শূন্য। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে রক্ষা করতে পারেনি, রাষ্ট্রও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিয়ান খান রাকিব বলেন, “হাড় নেই, চাপ দিবেন না—এই বাক্য আমাদের সমাজের ভয়াবহতার প্রতীক। যারা এমনভাবে শিক্ষার্থীদের কুপিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।”
পরিশেষে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত এই ভয়াবহ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা চলমান থাকলেও পুরো পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন কীভাবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করবে, তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এম আর এম – ১১৮৯, Signalbd.com



