খেলা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেন আসিফ আলি

Advertisement

পাকিস্তানের ক্রিকেট দলে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত আসিফ আলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, দেশের হয়ে খেলা তার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব হলেও এখন সময় এসেছে জাতীয় দলের জার্সি তুলে রাখার।

অবসরের ঘোষণা ও আবেগঘন বার্তা

আসিফ আলি তার ঘোষণায় লিখেছেন, পাকিস্তানের জার্সি গায়ে চাপানোই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাঠে নামা তার কাছে সম্মানের অধ্যায় হিসেবে থাকবে আজীবন। তবে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়ায় এবং ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে না পারায় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নেন।

আন্তর্জাতিক অভিষেক ও ক্যারিয়ারের শুরু

২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তান দলে অভিষেক হয় আসিফ আলির। একই বছরের জুনে তিনি ওয়ানডে দলে ডাক পান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাত বছরের মধ্যে তিনি পাকিস্তানের হয়ে ২১টি ওয়ানডে ও ৫৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাট হাতে সব মিলিয়ে করেছেন ৯৫৯ রান। যদিও তার ক্যারিয়ার গড় ছিল তেমন উজ্জ্বল নয়, তবে প্রয়োজনের মুহূর্তে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন একাধিকবার।

স্মরণীয় ইনিংস ও বড় মঞ্চের অবদান

আসিফ আলির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত ইনিংস ছিল ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তখন কঠিন পরিস্থিতিতে মাত্র ৭ বলে ২৫ রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি। সেই ইনিংস পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে তোলার পথ সুগম করেছিল।
এরপর ২০২২ সালের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ৮ বলে ১৬ রানের ক্যামিও খেলেও তিনি দলের জয়ে অবদান রাখেন। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিতে না পারায় তিনি ধীরে ধীরে জাতীয় দলের বাইরে চলে যান।

ফিনিশার হিসেবে খ্যাতি

পাকিস্তান ক্রিকেটে আসিফ আলিকে মূলত ফিনিশার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ব্যাট হাতে শেষ দিকে নেমে বড় ছক্কায় ম্যাচ শেষ করার দক্ষতার কারণে তাকে দলে রাখা হতো। তবে অনিয়মিত পারফরম্যান্স ও অফ ফর্মের কারণে তিনি স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারেননি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি।

জাতীয় দলে না থাকলেও খেলা চালিয়ে যাবেন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও আসিফ আলি পুরোপুরি ক্রিকেটকে বিদায় জানাননি। তিনি জানিয়েছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা চালিয়ে যাবেন। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এ নিয়মিত মুখ হিসেবে তিনি বহু বছর খেলেছেন এবং ভবিষ্যতেও ফ্র্যাঞ্চাইজি পর্যায়ে খেলার পরিকল্পনা রয়েছে।

পাকিস্তান ক্রিকেটে প্রভাব

আসিফ আলির মতো একজন হার্ডহিটার ব্যাটার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সরে দাঁড়ানো পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য একটি শূন্যতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও বর্তমানে পাকিস্তান দলে নতুন প্রজন্মের বেশ কিছু ব্যাটসম্যান উঠে আসছে, তবু অভিজ্ঞ ফিনিশারের ঘাটতি থেকে যেতে পারে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে শেষ দিকে বড় শট খেলার ক্ষমতা ম্যাচ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসিফ আলি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে পাকিস্তানের জন্য আরও অনেক অবদান রাখতে পারতেন। তবে তার খেলার ধরণ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। তাদের মতে, পাকিস্তান দলে এখনো এমন ফিনিশার খেলোয়াড়ের প্রয়োজন, যিনি চাপের মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া

অবসরের ঘোষণার পর পাকিস্তানের ক্রিকেটভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০২১ বিশ্বকাপের অবিস্মরণীয় ইনিংস, আবার কেউ বলেছেন ধারাবাহিকতার অভাবে তিনি দলে স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারেননি। তবে বেশিরভাগ সমর্থকই তার অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাফল্য কামনা করেছেন।

পরিশেষে

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন পাকিস্তানের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান আসিফ আলি। তার সাত বছরের ক্যারিয়ার হয়তো সংখ্যার দিক থেকে খুব উজ্জ্বল নয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলের হয়ে দেওয়া অবদান পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। এখন দেখার বিষয়, তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কতটা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারেন এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে তরুণ প্রজন্মকে কতটা অনুপ্রাণিত করতে পারেন।

এম আর এম – ১১৪৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button