বাংলাদেশ

আন্দোলনকারীদের কাছে ‘হেক্সা চাকু’ টাইপ কিছু ছিল: রমনা ডিসি

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলনকারীদের কাছে ‘হেক্সা চাকু’ জাতীয় ধারালো অস্ত্র ছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ ও শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে এবং আন্দোলনকারীরা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি

বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে এলাকাজুড়ে যান চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষে আহত হন পুলিশ সদস্য ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষের অনেকে।

রমনা ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীরা প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করলেও পরে হঠাৎ করে তারা যমুনা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে ছুটে যায়। পুলিশ তখন তাদের অনুসরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে।

পুলিশের অভিযোগ: অস্ত্র ব্যবহার

রমনা ডিসি জানান, সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে ‘হেক্সা চাকু’ জাতীয় ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। তাঁর ভাষায়, “তাদের কাছে হেক্সা ধরনের চাকু ছিল, যার কারণে আমাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।” এছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তবে তিনি স্বীকার করেন, সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরাও আহত হয়েছেন। “আমি নিজেই ঘটনাস্থলে ছিলাম। উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, কেউ আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন,” বলেন ডিসি।

শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও দাবি

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট কিছু দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ডিসি মাসুদ আলম জানান, “তাদের নেতারা আমাদের বলেছিলেন—প্রজ্ঞাপন জারি হলে তারা শাহবাগ ছেড়ে দেবেন। কিন্তু হঠাৎ করে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন।”

শাহবাগে জনদুর্ভোগ

শাহবাগ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কসংযোগস্থল। শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। রমনা ডিসি বলেন, “আমরা তাদের সরতে বলিনি, যদিও জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করে, তখন আমাদের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।”

সংঘর্ষ

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জোরদার হয়েছে। তারা বারবার শাহবাগ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি ঘিরে আগে কয়েকবার উত্তেজনা দেখা দিলেও এত বড় ধরনের সংঘর্ষ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঐতিহাসিকভাবেই দেশে বড় প্রভাব ফেলে। শাহবাগ আন্দোলন বা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো উদাহরণ আছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের উদ্বেগ

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, “যখন আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে এগোয়, তখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের দায়িত্ব পালন করতেই হয়েছে। যদি আমরা সাড়া না দিই, তবে আমাদের থাকার দরকার নেই।”

পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী, আন্দোলনকারীরা শুধু ইটপাটকেল ছোড়েনি, বরং ব্লক ভেঙে নিরাপত্তা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছে। এজন্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু পুলিশ বিনা প্ররোচনায় জলকামান ব্যবহার করে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করে। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, যার ফলে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।

তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে। অপরদিকে পুলিশের কঠোর অবস্থান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখলেও জনমনে প্রশ্ন তুলছে—শান্তিপূর্ণ সমাধান কি সম্ভব নয়?

আগামী কয়েকদিন পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করবে সরকারের পদক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কৌশলের ওপর।

এম আর এম – ১০৬০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button