বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে তদন্ত সংস্থা। রোববার রাতে বরিশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় তার বাবা, বেসরকারি টেলিভিশন মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা
রোববার রাতে সিআইডির একটি বিশেষ দল বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানার সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে। বরিশালের বাংলা বাজার এলাকার একটি ভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে।
কেন রিমান্ডে চাইছে পুলিশ
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান সোমবার আদালতে হাজির হয়ে তৌহিদ আফ্রিদির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, আসামি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, কারা কারা এ ঘটনায় ভূমিকা রেখেছে এবং হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। এজন্য দীর্ঘ সময় ধরে রিমান্ডে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
মামলার পটভূমি
গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে মো. আসাদুল হক বাবু নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত হয়ে তিনি হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
এরপর নিহত বাবুর বাবা জয়নাল আবেদীন ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ তালিকায় নাসির উদ্দিন সাথী এবং তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদির নামও উল্লেখ করা হয়।
নাসির উদ্দিন সাথীর গ্রেপ্তার
তৌহিদ আফ্রিদির আগে তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি দুজনেই এখন একই মামলায় গ্রেপ্তার অবস্থায় রয়েছেন।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গত বছর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়, আর এই আন্দোলন ঘিরেই যাত্রাবাড়ীর ঘটনাটি ঘটে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, সেদিন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল। যদিও এ অভিযোগের বিষয়ে এখনো আদালতে প্রমাণ হাজির হয়নি।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মত
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলাটি অত্যন্ত জটিল। কারণ এখানে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যদের নাম এসেছে। মামলার তদন্তে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হত্যাকাণ্ডে পরিকল্পিতভাবে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল, তাহলে এর প্রভাব পড়তে পারে দেশের রাজনীতি ও গণমাধ্যম অঙ্গনে। অন্যদিকে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এ মামলা ঘিরে আরও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
তৌহিদ আফ্রিদি জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত। তার গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের আবেদন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এটি প্রয়োজনীয়, আবার অনেক ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, এটি অন্যায্য।
সামনে কী হতে পারে
আদালত তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে তাকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হবে। এই সময়ে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে আদালত যদি রিমান্ড নামঞ্জুর করে, সেক্ষেত্রে অন্য আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মামলার অগ্রগতি এবং আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে ঘটনাটির পরবর্তী ধাপ।
তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয় এবং তদন্তে কী তথ্য উঠে আসে, তা এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে।
এম আর এম – ১০২৭, Signalbd.com



