ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। সূচকে ইতিবাচক অবস্থান থাকলেও বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দরপতন এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। টানা নয় সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহে এ পতন বাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা আশার বার্তা দিয়েছে।
কতটা কমেছে বাজার মূলধন?
গত সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষে এটি ছিল ৭ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, যা ০.৪৯ শতাংশ হ্রাস।
দুই সপ্তাহে পতন কত?
টানা নয় সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছিল প্রায় ৬৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে মোট হ্রাস হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মানে বাজারে একটি সাময়িক সংশোধন (Correction) ধাপ চলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
সূচকে ইতিবাচক প্রবণতা
মূলধন কমলেও সূচকের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ২৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৬২৩ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকও ইতিবাচক ছিল।
- ডিএসই শীর্ষ-৩০ সূচক (DS30) বেড়েছে ৯ পয়েন্ট
- ডিএসই শরীয়াহ সূচক (DSES) বেড়েছে ৪ পয়েন্ট
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৃদ্ধির পেছনে ছোট ও মাঝারি মূলধনি কোম্পানির শেয়ার দামের উত্থান দায়ী।
লেনদেনের গতি বেড়েছে ৩১ শতাংশের বেশি
লেনদেনের দিক থেকে গত সপ্তাহ ছিল বেশ সক্রিয়।
- সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৯০৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
- আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩১.৬২ শতাংশ।
এটি বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তার ইঙ্গিত বহন করছে। তবে বড় শেয়ারের দরপতন মূলধন কমিয়ে দিয়েছে।
কোন শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে?
গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (BSC) শেয়ারে।
- প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩.৭১%।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, যার গড় লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
শীর্ষ লেনদেনকারী তালিকায় আরও ছিল: - রেনাটা লিমিটেড
- গ্রামীণফোন
- রবি আজিয়াটা
- স্কয়ার ফার্মা
বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দর কেন কমল?
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, বড় মূলধনি কোম্পানি যেমন গ্রামীণফোন, রেনাটা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দর সামান্য কমেছে। এর মূল কারণ:
✔ প্রফিট বুকিং (Profit Taking): দীর্ঘ সময় ধরে দাম বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
✔ আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ডলার সংকট: বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে অনেক বহুজাতিক কোম্পানির আয়চাপ পড়েছে।
✔ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা কৌশল: নতুন নীতিমালা ও বাজেট ঘোষণার পর তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
বিনিয়োগকারীদের মনোভাব কেমন?
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই লেনদেন বৃদ্ধিকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে বাজার মূলধন কমায় কেউ কেউ সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের পরামর্শ—
✔ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
✔ মানসম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা উচিত।
✔ স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি কিছুটা বেশি।
আগামী সপ্তাহে বাজারের সম্ভাবনা
বাজারে লেনদেনের গতি বাড়ছে, যা ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় কোম্পানির শেয়ার দাম না বাড়লে বাজার মূলধন আবারও চাপের মুখে পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, ডলার সংকট, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহের বাজারে বড় ভূমিকা রাখবে।
MAH – 12468 , Signalbd.com



