বিশ্ব

স্কুল শিক্ষার্থীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রাশিয়া

Advertisement

রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে সম্প্রতি স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সামরিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। ৮ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এখানে অংশগ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণে তারা হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, ডামি গুলি চালানো, রুট মার্চ এবং নদী পার হওয়া সহ বিভিন্ন সামরিক কৌশল শিখেছে। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এটি শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম, শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা এবং নেতৃত্বগুণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের বিস্তারিত

ডন কসাক ক্যাডেট স্কুল এবং কসাক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই রুট মার্চে শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে বালি এবং অগভীর জলের মধ্য দিয়ে চলা, হামাগুড়ি দেওয়া, দলবদ্ধভাবে চলাচল এবং মানসিক দৃঢ়তা পরীক্ষা করার মতো প্রশিক্ষণ নেয়। ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া অভিজ্ঞ রুশ সেনাদের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

একজন শিক্ষার্থী অ্যান্টন বলেন, “আমি এখানে এসেছি কারণ আমি ভবিষ্যতে সামরিক পরিষেবায় অংশ নিতে চাই। আমার দেশের সেবা করা এবং নিজের লক্ষ্যপন্থী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।” অন্য ৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইভান জানায়, “আমরা হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি এবং ডামি গুলি চালিয়েছি। এটি আমাদের সাহসিকতা এবং মানসিক দৃঢ়তা বাড়াচ্ছে।”

রাশিয়ার উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন প্রশিক্ষণ শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করে। রুশ সৈনিক আলেকজান্ডার শোপিন বলেন, “শিশুদের কাছে আমার অভিজ্ঞতা পৌঁছে দিতে ভালো লাগে। এখানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি পরিবার হিসেবে গড়ে ওঠে।” অন্য প্রশিক্ষক ভ্লাদিমির ইয়ানেনকো যোগ করেন, “শিশুরা অভিজ্ঞতা থেকে বোঝাপড়া ও জ্ঞান অর্জন করছে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

সমালোচনা ও বিতর্ক

স্বাধীন শিশু অধিকার সংস্থা ‘নে নরমার’ এর মতে, শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং অস্ত্র পরিচালনা শেখানো মূলত মতবাদ এবং সামরিক প্রচারণার অংশ। সংস্থাটি মনে করে, শিশুদের মধ্যে এই ধরনের মানসিক চাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিজ্ঞতা এক ধরনের অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, প্রশিক্ষণটি শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং মানসিকভাবে দৃঢ় শিশু তৈরি করতে সহায়ক।

প্রশিক্ষণের সামাজিক প্রভাব

অভিভাবকরাও প্রশিক্ষণে সন্তানের অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট। একজন অভিভাবক বলেন, “শিশু সন্ধ্যায় ক্লান্ত হলেও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে ভীষণ খুশি। তারা শেখে দলের মধ্যে কাজ করার গুরুত্ব, দায়িত্ববোধ এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি। এটি তাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।”

শিক্ষার্থীদের মতামত

ছেলেমেয়েরা জানায়, তারা কঠোর প্রশিক্ষণে ক্লান্ত হলেও নিজের সীমা পরীক্ষা করা এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। এক শিক্ষার্থী বলেন, “রুট মার্চ আমাকে দেখিয়েছে আমার ইচ্ছাশক্তি কতটা শক্তিশালী।” এ ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেম বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে অভিভাবকরা মনে করছেন।

সামরিক প্রশিক্ষণের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

রাশিয়ায় শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ নতুন নয়। ইউক্রেন সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলে এই ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কসাক সম্প্রদায় এবং ক্যাডেট স্কুলগুলি শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা, নেতৃত্বগুণ এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও মানসিকতা গঠনের একটি উপায়। এটি শিশুরা কিভাবে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, সেটি এই ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তবে শিশু অধিকার সংস্থাগুলি এই প্রথার জন্য সতর্কতার বার্তা দিচ্ছে।

সংক্ষিপ্তসার

রাশিয়ার স্কুল শিক্ষার্থীদের সামরিক প্রশিক্ষণ বিতর্কিত হলেও এটি দেশের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। দেশপ্রেম, শারীরিক শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুদের নেতৃত্বগুণ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই ধরনের প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে প্রতিফলিত হবে এবং শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশের উপর এর প্রভাব কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হবে।

এম আর এম – ১০০১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button