
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) ও বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) নিয়মিতভাবে সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। এই সম্মেলনগুলো সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, এবং পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট ঢাকার পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিজিবি ও বিএসএফের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
আলোচ্য বিষয়সমূহ
সম্মেলনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে:
১. আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ
সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, মাদক পাচার, মানবপাচার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই অপরাধগুলো সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলে।
২. সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ
সীমান্তে এক সারিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৩. বাংলাদেশে আশ্রিত ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
বাংলাদেশে আশ্রিত ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলে। এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
৪. সীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন
সীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এতে সীমান্তে মোতায়েনকৃত বাহিনীর কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।
৫. সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (CBMP) বাস্তবায়ন
সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (CBMP) বাস্তবায়নের মাধ্যমে সীমান্তে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে। এটি সীমান্ত অঞ্চলের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
৬. পারস্পরিক আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সীমান্তে সংঘর্ষ ও ভুল বোঝাবুঝি প্রতিরোধ করা হবে। এটি সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
সম্মেলনের গুরুত্ব
এই সম্মেলন দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, এবং পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এটি দুই দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
অতীতের সম্মেলনসমূহ
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রথম সম্মেলন হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর, কলকাতায়। সেই সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআরের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল কাজি গোলাম দস্তগীর এবং বিএসএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিএসএফের সাবেক মহাপরিচালক অশ্বিনী কুমার।
সর্বশেষ সম্মেলনটি হয়েছিল ২০২৫ সালের ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি, নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর এই প্রথম ঢাকায় আসছে বিএসএফের প্রতিনিধি দল। এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, এবং পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এটি দুই দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, এবং পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এটি দুই দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
MAH – 12454 , Signalbd.comবিজিবি-বিএসএফের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন ঢাকায়