বিশ্ব

প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসল সিরিয়া-ইসরাইল

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসল সিরিয়া ও ইসরাইল। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠককে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আলোচনার বিস্তারিত

গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল শাইবানি এবং ইসরাইলি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মধ্যস্থতায় এই বৈঠক আয়োজিত হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কমানো এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।

এছাড়া উভয় পক্ষ ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতবিনিময় করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সিরিয়া-ইসরাইল সীমান্তে একটি বাফার জোন তৈরি হয়েছিল, যা বহু বছর ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই শত্রুতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে এ দুই দেশ। বিশেষ করে গোলান মালভূমি নিয়ে বিরোধ তাদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সেটি কার্যকরভাবে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

বিগত কয়েক দশক ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়নি। ফলে এবারের বৈঠককে অনেকেই এক বিরল ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের “স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য” পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই চাচ্ছিল সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করতে।
একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সিরিয়া ও ইসরাইলের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হবে।”

প্রতিক্রিয়া ও তাৎপর্য

আলোচনার পরও সিরিয়া বা ইসরাইলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মহলে এ ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সীমান্ত ইস্যু ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস কাটাতে সময় লাগবে।

আঞ্চলিক প্রভাব

সিরিয়া-ইসরাইল বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। লেবানন ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাদের মতে, ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসা মানে সিরিয়ার নীতিতে পরিবর্তন।
অন্যদিকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো এই আলোচনাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তারা মনে করছে, দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হবে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়া আসলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। বহু বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকট সিরিয়াকে কূটনৈতিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছিল।
অন্যদিকে ইসরাইলও আঞ্চলিক উত্তেজনা কমিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায়। ফলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় বসা উভয়ের জন্যই কৌশলগতভাবে লাভজনক হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আন্তর্জাতিক মহল আশাবাদী যে, সিরিয়া ও ইসরাইল যদি নিয়মিত আলোচনায় বসে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক কূটনৈতিক বাস্তবতার জন্ম হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে যদি আরও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং উভয় পক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

পরিশেষে

দীর্ঘ শত্রুতা, যুদ্ধ ও অবিশ্বাসের ইতিহাস পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসল সিরিয়া ও ইসরাইল। প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শুধু দুই দেশের সম্পর্কেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ আলোচনার ফল কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, এবং আদৌ কি এর মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে?

এম আর এম – ০৯৫৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button