ফুটবল

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, আহত ৩১ জন

Advertisement

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দুই ইউনিয়নের খেলোয়াড় ও দর্শকের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় দুইজনকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার সময় ও স্থান

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা স্কুল মাঠে। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন এবং জয়কলস ইউনিয়নের মধ্যে আয়োজিত ফুটবল খেলা চলাকালীন সময়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, খেলার সময় রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে জয়কলস ইউনিয়নের কয়েকজন খেলোয়াড় অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। তাদের দাবি অনুযায়ী রেফারির সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ায় খেলা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইকে ঘোষণা দেন যে, পুরো খেলার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে রেফারির সিদ্ধান্তে যদি কোনো ভুল থাকে, তবে সংশোধন করা হবে।

খেলার পুনঃসূচনা এবং উত্তেজনার বৃদ্ধি

ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার পর খেলা পুনরায় শুরু হয়। তবে খেলার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়কলস ইউনিয়নের একজন খেলোয়াড় প্রতিপক্ষকে সজোরে ধাক্কা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর দর্শকরা মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের মধ্যে ঝগড়ায় জড়িত হন। বিশেষ করে লাল টি-শার্ট পরিহিত এক যুবক মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের উপর লাথি চালালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

পরে আরও দর্শক মাঠে নেমে মারধরে জড়িত হন এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংঘর্ষের এই ঘটনায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

খেলায় অগ্রগতি এবং পরিস্থিতি

সংঘর্ষের সময় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন জয়কলস ইউনিয়নের চেয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল। উত্তেজনার কারণে খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো দল জয়ী ঘোষণা করা হয়নি।

আহতদের অবস্থা

শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তারিক জামিল অপু বলেন, “সংঘর্ষের ঘটনায় ৩১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় একজনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং আরেকজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহতদের মধ্যে বাকি সবাইকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে অনেকের শরীরে ছেঁড়া-ছেঁড়া ক্ষত ও নরম টিস্যুর আঘাত দেখা দিয়েছে।

পুলিশের পদক্ষেপ

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকরাম আলী জানান, “সংঘর্ষের খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে মাঠে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ সূত্র জানায়, মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজনকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসনের মন্তব্য

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, “ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে খেলার সময়ের ঘটনাবলি ও রেফারির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “খেলাধুলা মানুষের জন্য আনন্দের উৎস। কিন্তু এমন সংঘর্ষ পুরো সম্প্রদায়ের জন্যই হুমকিস্বরূপ। প্রশাসনের উচিত খেলার নিরাপত্তা এবং দর্শক নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”

অনেকে আরও জানিয়েছেন যে, উত্তেজনা মূলত রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং খেলোয়াড়দের আচরণের কারণে শুরু হয়েছে। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে খেলার আগে সঠিক নিয়মনীতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

ফুটবল এবং সামাজিক প্রভাব

ফুটবল আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের টুর্নামেন্টের মাধ্যমে স্থানীয় যুবকরা খেলার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশ করে। কিন্তু এ ধরনের সংঘর্ষ খেলাধুলার আনন্দকে ব্যাহত করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাঠে নিরাপত্তা ও দর্শক নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে বাধ্য। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতিটি টুর্নামেন্টের জন্য নিরাপত্তা কর্মী এবং প্রথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা উচিত।

পরামর্শ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে একত্রিতভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সময় কঠোর নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ফুটবল প্রেমীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খেলা উপভোগ করার সুযোগ দেওয়া জরুরি।

এছাড়া খেলোয়াড় ও দর্শকরা মনোযোগী এবং ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে। এতে করে খেলার সময় উত্তেজনা ও অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হবে।

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলার সময় সংঘর্ষের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, খেলা শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি সামাজিক সংহতি এবং বিনোদনের মাধ্যম। তবে, প্রশাসন, পুলিশ ও কমিউনিটির দায়িত্ব হলো এটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করা।

MAH – 12403 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button