ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিশেষ করে তেল আমদানি নিয়ে ভারত যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা চলতে থাকলে আরও কঠোর শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এ ঘোষণা আসলো আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ঠিক আগে, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
বেসেন্ট বুধবার ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছি। বৈঠকের ফলাফল যদি সন্তোষজনক না হয়, তবে এই শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানো হবে।” তিনি আরও বলেন, আলাস্কার বৈঠকে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর আরেকটি শুল্কের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এখন মার্কিন কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বৈঠক যদি ফলপ্রসূ না হয়, তবে এই হার আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার মূল বিষয় হবে ইউক্রেন যুদ্ধের স্থিতিশীলতা এবং রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সতর্ক করে বলেছেন, মস্কো যদি শান্তিচুক্তি মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে এর গুরুতর প্রভাব পড়বে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্টের ভাষ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় দেশগুলোরও উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আরোপে অংশগ্রহণ করা। তবে তারা এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।
ভারতের অবস্থান ও ব্যাখ্যা
ভারত জানিয়েছে, বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে তারা সবচেয়ে সস্তা তেল কিনতে বাধ্য। এতে দেশের লাখো দরিদ্র মানুষ মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে মুক্ত থাকে। ২০২১ সালে ভারতের মোট তেল আমদানি রাশিয়া থেকে মাত্র ৩ শতাংশ ছিল। তবে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫–৪০ শতাংশ।
ভারত মনে করছে, দেশের স্বার্থে সস্তা তেল কেনা অপরিহার্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই হুঁশিয়ারি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি সরাসরি ভারতের আন্তর্জাতিক কৌশলকে প্রভাবিত করতে পারে। একদিকে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য চাপ দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
কংগ্রেসের কিছু সদস্য এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করেছেন। শশী থারুর মন্তব্য করেন, “ভারতকে কিছুটা জেদি বলা ঠিক নয়, বরং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য এটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ফলাফল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শুল্কের সম্ভাব্য বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক চাপ দেশটির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ভারতের রাশিয়ার তেল আমদানিতে এই হুঁশিয়ারি সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধি হলে ভারতের তেল খরচ ও জ্বালানি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈঠকের ফলাফল যদি সন্তোষজনক হয়, তবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ আছে। অন্যদিকে, যদি বৈঠক ব্যর্থ হয়, তবে কঠোর শুল্ক ও আন্তর্জাতিক চাপ ভারতের নীতি-নির্ধারণকে প্রভাবিত করবে।
মোটকথা, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পরবর্তী ফলাফল ভারতের আন্তর্জাতিক কৌশল ও অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। দেশটির জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করা।
এম আর এম – ০৮৭৪, Signalbd.com