ঢাবি থেকে পৃথক হলো অধিভুক্ত ৭ কলেজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের প্রশাসনিক, একাডেমিক ও আর্থিক দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রতিষ্ঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের আলোচিত পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলো। শিক্ষা মহলে এই সিদ্ধান্ত নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব হস্তান্তর
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক একেএম ইলিয়াসের কাছে এই দায়িত্ব ও তথ্য হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তথ্য, ছবি এবং ভর্তি পরীক্ষার ফি-সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
আগের ঘটনা
সরকারি ৭ কলেজ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে গত কয়েক বছরে ভর্তি পরীক্ষা, পরীক্ষার সময়সূচি, রেজাল্ট প্রকাশ ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ছাত্র-শিক্ষক উভয় পক্ষেই অসন্তোষ দেখা দেয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের জরুরি বৈঠকে এই কলেজগুলোকে পৃথক করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে প্রশাসনিক, একাডেমিক এবং আর্থিক দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তুতি শুরু হয়।
পৃথকীকরণের প্রভাব
ঢাবি থেকে পৃথক হওয়ার ফলে সাত কলেজ এখন থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি-এর অধীনে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ নতুন প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হবে।
শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ভর্তি ও পরীক্ষার জটিলতা কমবে। একই সঙ্গে সেশনজট হ্রাস, দ্রুত ফল প্রকাশ এবং ক্লাস পরিচালনা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাত কলেজের তালিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে পৃথক হওয়া সাতটি সরকারি কলেজ হলো
১. ঢাকা কলেজ
২. ইডেন মহিলা কলেজ
৩. সরকারি তিতুমীর কলেজ
৪. সরকারি বাঙলা কলেজ
৫. সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
৬. সরকারি কাবুলিয়াতি কলেজ
৭. সরকারি বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ
বিশেষজ্ঞদের মতামত
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে শিক্ষার মান ও প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়বে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে, যেমন অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠ্যসূচি সমন্বয়।
একজন সাবেক শিক্ষা সচিব বলেন, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ ধরনের বড় দায়িত্ব নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এটি শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দ্রুত অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থা, ডিজিটাল রেজাল্ট সিস্টেম এবং আধুনিক একাডেমিক ব্যবস্থাপনা চালু করবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত লাইব্রেরি সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ ও গবেষণা তহবিল গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
শেষ কথা
ঢাবি থেকে পৃথক হওয়া সরকারি ৭ কলেজের নতুন যাত্রা শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কত দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর করতে পারে।
এম আর এম – ০৮৫৯, Signalbd.com