গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হাইকোর্ট ভবনে প্রবেশের সময় গাঁজা, মদ ও ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা শহরের শাহবাগ এলাকায়। ওই যুবকের কাছ থেকে দুই পিছ ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনাস্থল ও আটককৃতের তথ্য
মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পাশের অ্যানেক্স ভবনে প্রবেশের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুবক হাফিজুর রহমানকে আটক করে। হাফিজুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি পারিবারিক একটি মামলার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে হাইকোর্টে এসেছিলেন। তার বাড়ি মাগুরায়। পুলিশের তল্লাশিতে তার ব্যাগ থেকে মাদকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া যায়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, “ওই যুবক তার ব্যাগটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে নিচে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি জানেন না, কে বা কারা তার ব্যাগে মাদকগুলি রেখেছে। বিষয়টি আমরা যাচাই করছি।”
মাদক নিয়ে হাইকোর্টে প্রবেশ: এক অস্বাভাবিক ঘটনা
মাদক নিয়ে আদালতের প্রধান ভবনে প্রবেশের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত হাইকোর্ট ও অন্যান্য উচ্চ আদালতের প্রবেশপথে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। তবু মাদকসহ একজন ব্যক্তি প্রবেশের চেষ্টা করায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তার গুণগত মান সম্পর্কে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব শুধু মাদক সনাক্ত নয়, বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে যেন এমন কোনো ঘটনা আর ঘটতে না পারে।”
দেশের মাদক পরিস্থিতি: কিছু তথ্য ও পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে মাদকের ব্যবহার এবং পাচার একটি বড় সামাজিক সমস্যা। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন ও বিক্রি এখনও ব্যাপক আকারে রয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত বছর মাদকবিরোধী অভিযানে লাখ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ এবং হাজার হাজার মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছেন। তবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, “আমরা যুবককে আটক করেছি এবং বিষয়টি তদন্তাধীন। যদি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরো জোরদার করা হবে।”
পুলিশ ও আদালত কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কড়াকড়ি এবং সুনির্দিষ্ট তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বিশ্লেষণ
মাদকবিরোধী কর্মসূচির একজন বিশ্লেষক বলেন, “এমন ঘটনা আইনশৃঙ্খলার জন্য অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আদালত ভবনের নিরাপত্তা আরো কঠোর হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, সামাজিক গবেষকরা বলছেন, “তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদক প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। শুধু আইনশৃঙ্খলা না, সচেতনতা ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠন জরুরি।”
মাদকবিরোধী প্রচারণার প্রয়োজনীয়তা
মাদককে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো ব্যাপক ও কার্যকর প্রচারণা চালাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায় পর্যন্ত মাদকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি, হাইকোর্টের মতো সংবেদনশীল স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
শেষ কথা
গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে মাদকসহ এক যুবকের আটক একটি উদ্বেগজনক ঘটনা হলেও এটি সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একটি সতর্কবার্তা। ভবিষ্যতে আদালত ভবনসহ সকল সরকারি স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইন প্রয়োগ।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা থেকে কি শিক্ষা নেওয়া হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কি পরিবর্তন আসবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রশাসনিক পদক্ষেপের ওপর।
এম আর এম – ০৮২৫, Signalbd.com



