এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে দেরি করে এসে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা আনিসা আহমেদকে নিয়ে যে তীব্র আলোচনা হয়েছিল, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের যৌথ তদন্তে মায়ের অসুস্থতার যে দাবি করেছিলেন আনিসা, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ নম্বর পেলে তিনি দুই পত্র মিলিয়ে পাস হিসেবে গণ্য হবেন।
ঘটনার বিস্তারিত
৪ আগস্ট ২০২৫, এইচএসসির বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার দিন সকাল। সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পর উপস্থিত হন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদ। কেন্দ্রে ঢুকতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আনিসা দাবি করেছিলেন, পরীক্ষার দিন সকালে তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল, আর এই কারণে তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রে দেরি করে পৌঁছান।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও প্রথম সিদ্ধান্ত
ঘটনার ভিডিও ও ছবি মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনেকেই আনিসার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলেন। নেটিজেনদের চাপ এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড প্রাথমিকভাবে ঘোষণা দেয় যে, বিশেষ ব্যবস্থায় তার বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির গঠন ও অনুসন্ধান
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়—একটি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে, অন্যটি আনিসার পরীক্ষা কেন্দ্র সরকারি বাঙলা কলেজের পক্ষ থেকে। তদন্তে আনিসার দেওয়া তথ্য ও নথিপত্র পরীক্ষা করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আনিসার মা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নিয়মিত রোগী হলেও, পরীক্ষার দিন হঠাৎ ভর্তি হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার স্লিপসহ যেসব তথ্য জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও সন্দেহজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বোর্ড ও কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান জানান, তদন্ত কমিটির অনুরোধে তারা আনিসার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে দিয়েছেন। তবে যদি শিক্ষার্থী ভুয়া স্লিপ জমা দেয়, তাহলে সেটি যাচাইয়ের দায়িত্ব তদন্ত কমিটির। আর কমিটি যখন সত্যতা খুঁজে পায়নি, তখন পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগও বাতিল হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো পরীক্ষার্থী যদি প্রথমপত্রে পরীক্ষা দিতে না পারে, তবে দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ নম্বর পেলেই উভয় পত্রে পাস হিসেবে গণ্য হবে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সম্ভাবনা
নিয়ম অনুযায়ী, আনিসা যদি বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ বা তার বেশি নম্বর পেতে পারেন এবং অন্যান্য বিষয়ে পাস করেন, তবে তিনি সমগ্র বিষয়ে উত্তীর্ণ হবেন। অর্থাৎ, প্রথমপত্র পরীক্ষা না দিয়েও নিয়ম মেনে পাস করা সম্ভব। তবে তা নির্ভর করছে দ্বিতীয়পত্রের ফলাফলের ওপর।
ঘটনার প্রভাব ও শিক্ষা
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিক সহানুভূতি ও প্রশাসনিক নিয়ম—দুই দিকেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে পরীক্ষার্থীদের জন্য কঠোর সময়সীমা ও নিয়মের প্রয়োগ, অন্যদিকে অসুস্থতার মতো পরিস্থিতিতে নমনীয়তার প্রয়োজন—এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। তবে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, নথি ও তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে ছাড় দেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে।
সারসংক্ষেপ
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনিসার প্রথমপত্র পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়েছে। এখন তার সামনে একমাত্র সুযোগ হলো বাংলা দ্বিতীয়পত্রে যথেষ্ট নম্বর অর্জন করা। ঘটনাটি প্রমাণ করেছে, পরীক্ষা-সংক্রান্ত যে কোনো বিশেষ ছাড়ের ক্ষেত্রে প্রমাণ ও তথ্যের গুরুত্ব কতটা বেশি। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এম আর এম – ০৭৮১, Signalbd.com



