সরকারি হাসপাতালে চাকরি যাওয়ার ভয় না থাকায় সেবাগ্রহীতারা কাঙিক্ষত সেবা পান না

সরকারি হাসপাতালে চাকরি হারানোর আশঙ্কা না থাকার কারণে সেবাগ্রহীতারা কাঙ্ক্ষিত ও মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কনভেনশনে তিনি এ কথা বলেন।
সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি সবাইকে তিন মাসব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করে রোগীদের জন্য কার্যকর সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সরকারি হাসপাতালের সেবার গুণগত মান ও জবাবদিহিতার অবস্থা
সরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার পেছনে অনেক জটিল কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কর্মীদের মাঝে চাকরি হারানোর ভয়ের অভাব থাকায় দায়িত্বহীনতা দেখা দেয়। সরকারি কর্মচারীদের চাকরি নিরাপত্তা তাদের কর্মপ্রণালীতে প্রভাব ফেলে। এর ফলে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং রোগীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সচিব মো. সাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, “যখন কর্মচারীদের উপর সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহিতা থাকবে, তখন স্বাস্থ্যখাতের সেবা মান উন্নত হবে। আমাদের লক্ষ্য হল প্রতিটি রোগী যেন দ্রুত, নির্ভুল ও সম্মানজনক সেবা পায়।”
স্বাস্থ্যখাতে ইতিপূর্বে যেসব পরিবর্তন এসেছে
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটালাইজেশন, টেলিমেডিসিন, এবং রোগী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা চালু হলেও কর্মীদের মনোভাব ও দায়িত্বশীলতার অভাব নানা সময়ে সেবা প্রদান ব্যাহত করেছে। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়, চিকিৎসকের ঘাটতি ও সেবার অনিয়ম এখনও বড় চ্যালেঞ্জ।
এর পাশাপাশি হাসপাতালের পরিচালনায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়মিতই সামনে আসে, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়। এসব কারণে জনসাধারণের মাঝে সরকারি হাসপাতালে নির্ভরতার সংকট তৈরি হয়েছে।
রোগীদের ওপর সেবার প্রভাব ও জনমত
সরকারি হাসপাতালের সেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। কাঙ্খিত চিকিৎসা ও যত্ন না পেয়ে অনেক রোগী ও তাদের স্বজন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে ঝুঁকছেন, যার ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
একজন রোগীর স্বজন জানালেন, “সরকারি হাসপাতালে সেবার মান অনেক কম। চিকিৎসকরা দায়িত্বশীল না, রোগীর সুরক্ষা বা সময় খুব একটা বিবেচনা করেন না। ফলে আমরা প্রাইভেট হাসপাতালে যাই, যা আমাদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তৈরি করে।”
স্বাস্থ্যখাতে জবাবদিহিতা ও মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা
স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর জন্য সময়মতো সেবা নিশ্চিত করতে হলে কর্মচারীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, মনিটরিং সিস্টেম এবং কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি।
সচিব সাইদুর রহমান বলেন, “আমাদের উচিত কর্মপরিবেশ এমনভাবে তৈরি করা যাতে প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী তার দায়িত্ব পালনে উৎসাহী হয়। চাকরি নিরাপত্তা থাকলেও সেবার মানকে প্রাধান্য দিতে হবে।”
ভবিষ্যতে পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা
স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ তিন মাসব্যাপী কার্যকরী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পরিবর্তন আনা, রোগী অভিযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা সফল হলে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সেবা অনেক ভালো হবে এবং জনগণের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে।
“স্বাস্থ্যখাতে সেবা মানোন্নয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত থাকবেন,”— স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।
সারসংক্ষেপ
সরকারি হাসপাতালে সেবাগ্রহীতারা এখনও কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না মূলত কর্মীদের দায়বদ্ধতার অভাব এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে। তবে স্বাস্থ্যখাতে মানোন্নয়নের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নেওয়ায় আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। আগামী সময় এই উদ্যোগগুলো কিভাবে ফলপ্রসূ হয়, তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখানে জবাবদিহিতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিই সেবা মান উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করা হচ্ছে।
এম আর এম – ০৭৭১, Signalbd.com