
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা বাংলাদেশে প্রবাহিত তিতাস নদীর পানি ব্যবহার করে রাজ্যের রাজধানী আগরতলা পৌর কর্পোরেশন এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের পরিকল্পনা করছে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানা গেছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এই উদ্যোগের বিষয়ে সম্প্রতি তথ্য দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিতাস নদীর পানি ব্যবহার করে শহরের ৫১টি ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এই প্রস্তাবনার ওপর গবেষণা চলছে এবং সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
তিতাস নদীর ভৌগোলিক ও হাইড্রোলজিক্যাল প্রেক্ষাপট
তিতাস নদী বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। এটি বাংলাদেশের মেঘনা নদীতে মিলিত হয়ে সুরমা-মেঘনা নদী ব্যবস্থার একটি অংশ গঠন করে। নদীটি পরবর্তীতে ত্রিপুরার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা জানান, তিনি তিতাস নদীর সংযোগ, প্রবাহ এবং পানি পরিমাণ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পেয়েছেন। নদীর পানি যাতে আয়রনবিহীন এবং নিরাপদ থাকে, সেই বিষয়ে ত্রিপুরা সরকার কাজ করছে।
আগরতলা শহরের পানীয় জল চাহিদা
ত্রিপুরার ২০টি শহরাঞ্চলের জন্য জিআইএস মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে আগরতলা পৌর কর্পোরেশনও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শহরের মাস্টার প্ল্যান ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে প্রায় ৫৩০ কোটি রুপি বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে।
তিতাস নদীর পানি ব্যবহার করলে শহরের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ হবে এবং নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আগের উদ্ভাবনী প্রকল্প ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা
ত্রিপুরা পূর্বেও বিভিন্ন নদী থেকে পানি সংগ্রহ ও পরিশোধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ ধরনের প্রকল্পে পানি পরিশোধন এবং পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দুই দেশের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নদী ব্যবহারের প্রকল্পে পানি সংরক্ষণ, পরিবেশগত প্রভাব এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহমত নেওয়াও প্রয়োজন।
সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
তিতাস নদীর পানি ব্যবহার হলে আগরতলার পানীয় জল সরবরাহে স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। ত্রিপুরার নাগরিকরা নিয়মিত এবং নিরাপদ পানি পাবেন। একই সঙ্গে নদীর ব্যবস্থাপনায় উভয় দেশের সমন্বয় অপরিহার্য।
বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নদীর পানির আন্তর্জাতিক ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কৌশল ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে দুটি দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
জলবিজ্ঞানী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নদীর পানি ব্যবহার শুধুমাত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করবে না, বরং নদীর সংরক্ষণ ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনায়ও সহায়ক হবে। বিশেষ করে ত্রিপুরার জল সরবরাহ ও নগর উন্নয়নের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, “আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা নিরাপদ পানি পাবেন এবং শহরের জল ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে।”
সংক্ষিপ্তসার
ত্রিপুরা সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী তিতাস নদীর পানি ব্যবহার করলে আগরতলার পানীয় জল সরবরাহের সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। তবে এটি কার্যকর করার জন্য দুই দেশের মধ্যে সুসংগত সমন্বয়, পরিবেশগত বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। আগামী দিনে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কবে এবং কেমন হবে, তা নজরদারির বিষয়।
এম আর এম – ১১০৬, Signalbd.com