জাতীয়

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে

Advertisement

আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি জানান, প্রবাসীদের ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম সেপ্টেম্বরে শুরু হবে এবং ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে ইসির গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং আগামী সেপ্টেম্বর থেকে প্রবাসীদের জন্য ভোটার এডুকেশন কর্মসূচি শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটার তালিকা আপডেটের কাজ চলমান রয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ভোটারের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে পারবেন, তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। প্রবাসীদের ভোটের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে ভোটদান প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়।

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রবাসী ভোটারদের ভূমিকা

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি চূড়ান্ত করেছে। প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হবে। মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা রাখা হবে, তবে এতে খরচ অনেক বেশি, প্রতি লাখ ভোটারের জন্য ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ভোটের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য প্রার্থীর নাম বাদ দিয়ে শুধু প্রতীক দেয়া হবে।

প্রবাসীরা আগামী নির্বাচনে দেশ থেকে দূরে থাকা সত্বেও সহজে ভোট দিতে পারবেন। ভোট দেওয়ার জন্য তিন সপ্তাহ সময়সীমা দেওয়া হবে প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য। এছাড়া দেশের ভিতরে যারা আইনি হেফাজতে রয়েছেন, সরকারি কর্মচারী ও ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচনের পূর্বপটভূমি ও বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশে সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে নানা রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পিছিয়ে এসেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন দ্রুত ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য।

প্রভাব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলো জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও তৎপরতার উপরই নির্ভর করছে জাতীয় নির্বাচনের সাফল্য।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময়মতো তফসিল ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার ও অংশগ্রহণ বাড়ানো দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মজবুত করবে। তবে ভোটার তালিকা নির্ভুল ও বৈধ করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর মনোযোগ দিতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু নির্বাচন আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে। আগামী ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে।

“আমরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের জন্য ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করা হবে,”—নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ।

সারসংক্ষেপ  

আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রস্তুতি স্বতঃস্ফূর্ত ও সমন্বিত হলে দেশের গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের ফলাফল ও প্রভাব নির্ভর করবে প্রস্তুতি ও পরিস্থিতির ওপর, যা আগামী দিনগুলোতে স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ০৭৩৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button