কিছু সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন করেছি: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমরা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার নিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনেও সফল হয়েছি।”
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। সন্ধ্যা সোয়া ৮টার দিকে সরাসরি সম্প্রচারে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভাষণে কী বললেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, “এক বছর আগে এ দিনে আমাদের দেশ এক ভয়াবহ স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি পায়। জনগণের অসীম ত্যাগ ও সংগ্রামে অর্জিত এই মুক্তি আজ দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।”
তিনি বলেন, “সংবিধান, প্রশাসন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক সংস্কার ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা একাধিক আইন প্রণয়ন করেছি।”
কীভাবে এসেছিল এই সরকার
গত বছরের জুলাই মাসে ব্যাপক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচারী সরকারের পতন প্রত্যক্ষ করে। আদালতের একটি রায়ে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হওয়ায় শিক্ষার্থী সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে তা গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
এই প্রেক্ষাপটেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টা পরিষদ। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় তারা জাতিকে একটি নির্বাচিত সরকারের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করছে।
সংস্কারের মূল ক্ষেত্র ও অর্জন
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং রাজনৈতিক শান্তি ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেন, “একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। আজ আমরা বলতে পারি, সেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছি।”
তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার সফল সমাপ্তি আমাদের অর্থনীতির সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও তথ্য কমিশনকেও আরও স্বাধীন ও কার্যকর করার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের রূপরেখা ও সময়সূচি ঘোষণা
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জানান, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠানোর কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যেই নির্বাচনের একটি সময়সূচি জাতিকে জানিয়েছিলাম। আমরা সে প্রতিশ্রুতি রাখছি। আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র অনুযায়ী নির্বাচন-সংক্রান্ত সকল সাংবিধানিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
বিরোধী দল ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিরোধী দল ও বিশ্লেষক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ সরকারকে সাধুবাদ জানালেও, অনেকের প্রশ্ন— এই সংস্কারগুলো কতটুকু কার্যকর হয়েছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ আশার বার্তা দেয়, তবে সংস্কারের বাস্তব রূপায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য আরও সময় দরকার।” তিনি বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ ছিল দৃঢ় বার্তা ও প্রতিশ্রুতির সমন্বয়ে গঠিত। দেশে একটি গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য জাতিকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা ছিল এতে স্পষ্ট।
তবে বাস্তবতা হলো, সংস্কারের গতি আরও ত্বরান্বিত করা দরকার, যাতে নির্বাচনের পূর্বে জনগণের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী কয়েক মাস দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
এম আর এম – ০৭০৭, Signalbd.com