বিশ্ব

গাজায় কেউ না খেয়ে নেই – দাবি নেতানিয়াহুর, দ্বিমত ট্রাম্পের

Advertisement

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজায় এখন কেউ না খেয়ে নেই এবং অনাহারে রাখার কোনো নীতি তাদের নেই। তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, গাজার বাস্তবতা নেতানিয়াহুর দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। অনাহারে কাতর শিশুদের ছবি দেখে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য: গাজায় নেই অনাহার

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা যুদ্ধ চলার মধ্যেও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছি। না হলে গাজায় এখন কোনো মানুষই বেঁচে থাকত না। গাজায় কাউকে অনাহারে রাখার নীতি আমাদের নেই।” ইসরায়েলি সরকারের দাবি, তারা প্রতিনিয়ত গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিচ্ছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আরও দাবি করেছেন, গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার জন্য হামাস দায়ী। তাদের অভিযোগ, হামাস ত্রাণ কেড়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তবে এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি ইসরায়েল।

ট্রাম্পের দ্বিমত: গাজার শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার প্রকাশ্যে তার বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “গাজার শিশুদের যে ছবি আমরা দেখছি, তাতে স্পষ্ট তারা অনাহারে ভুগছে। সেসব শিশুদের মুখে শুধুই ক্ষুধার্ত দৃষ্টি।” তিনি বলেন, বাস্তবতার সঙ্গে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের কোনো মিল নেই।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ইসরায়েলের নীতির ওপর চাপ বাড়াতে পারে।

মানবিক সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল সম্প্রতি গাজায় মানবিক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে। আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা এবং সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ প্রবেশের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সহায়তা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অন্তত এক সপ্তাহ চলবে। তবে গাজার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি। খাদ্য ও ওষুধের সংকট আগের মতোই রয়ে গেছে।

গাজায় বসবাসকারী হাসান আল-জালান বলেন, “আকাশ থেকে ছোলা বা অন্যান্য খাবার ফেলা হচ্ছে। এগুলো মাটিতে পড়েই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ খাবারের জন্য লড়াই করছে। এটা অপমানজনক।” এই মন্তব্য স্পষ্ট করে দেয়, এ ধরনের সাহায্য কার্যকর হচ্ছে না।

মৃত্যু ও অপুষ্টির ভয়াবহ চিত্র

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজায় অনাহারে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। গত ছয় মাসে গাজায় অনাহারে ১১ জন মারা গিয়েছিল, সেখানে এক মাসে ৬৩ জনের মৃত্যু পরিস্থিতির ভয়াবহতা নির্দেশ করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব আরও বেশি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসেই ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে।

গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন প্রতিদিনই অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক শিশু এমন অবস্থায় মারা যাচ্ছে, যারা আগে কোনো বড় অসুখে আক্রান্ত ছিল না। এর মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, উত্তর গাজায় তীব্র অপুষ্টি তিনগুণ বেড়েছে। পাঁচ বছরের নিচে প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে।

ইসরায়েলি অভিযোগ বনাম জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় নিয়মিত ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে হামাস এসব ত্রাণ লুট করে নেয়। অন্যদিকে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলের এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বরং পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দিলে লুটপাটের প্রবণতা কমবে বলেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মত।

‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বহুদিন ধরেই গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দিচ্ছে। তারা বলেছে, সঠিক তথ্য সংগ্রহের সুযোগ না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা যাচ্ছে না, তবে পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই ভয়াবহ।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত ত্রাণ সহায়তা কার্যকর না হয়, তাহলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে। অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক চাপ আরও তীব্র হবে। এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়, গাজার এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের সমাধান কীভাবে হবে এবং নেতানিয়াহুর বক্তব্য বাস্তবে কতটা সঠিক।

এম আর এম – ০৫৯৪ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button