বিশ্ব

গাজায় প্রতি তিনজনের একজন দিনের পর দিন খাবার ছাড়াই থাকছেন: ইউনিসেফ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে প্রতি তিনজনের একজন মানুষ দিনের পর দিন খাবার ছাড়াই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে।

ইউনিসেফের উদ্বেগ ও জরুরি আহ্বান

ইউনিসেফের মানবিক সহায়তা বিভাগের উপ নির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেখানে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে এখনই পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার শিশু মৃত্যু বরণ করবে। গাজায় শিশুরা অভূতপূর্ব হারে মারা যাচ্ছে, যা মানবিক দিক থেকে ভয়াবহ সংকেত।”

যুদ্ধের কারণে গাজায় অবরুদ্ধ পরিস্থিতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকাটি কার্যত অবরুদ্ধ। খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৬২ জন মানুষের, যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই ৯২।

শিশুদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়

মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় যে পরিমাণ শিশুর জন্ম হচ্ছে, তা যুদ্ধের মধ্যেই। নিরাপদ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা না থাকায় নবজাতক ও ছোট শিশুদের জীবন ঝুঁকির মুখে।
সম্প্রতি ১৭ বছর বয়সী আতেফ আবু খাতের নামে এক ফিলিস্তিনি কিশোর মারাত্মক অপুষ্টির কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। তার পরিবার জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসের অভাবে তার শরীর ভেঙে যায় এবং চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিল না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান

গাজায় চলমান এই দুরবস্থা থামাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থা। তারা বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং অবরোধ তুলে দিয়ে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের পথ খুলে দেওয়া প্রয়োজন।
জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যও সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলের উচিত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সতর্কতা

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় অন্তত ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। খাদ্য ঘাটতির কারণে তারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, “প্রতিদিনই ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যত ত্রাণ পাঠাই না কেন, তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।”

মৃত্যুর মিছিল থামছেই না

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো মানুষকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
এছাড়া ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত এক সপ্তাহেই শুধুমাত্র ক্ষুধার কারণে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় মানবিক সহায়তা যত দ্রুত না পৌঁছায়, ততই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তারা মনে করছেন, শুধুমাত্র সামরিক সমাধানের চেষ্টা না করে আন্তর্জাতিক মহলকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

কী হতে পারে সামনে?

মানবিক সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, এই মুহূর্তে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা না দেওয়া হয়, তাহলে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ আরও বিস্তৃত আকার নেবে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও যুদ্ধবিরতির কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।


প্রশ্ন থেকে যায় — বিশ্ব কি এখনো সময় থাকতে এই মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে পারবে, নাকি গাজা আরও এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে?
এম আর এম – ০৬৪১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button