৭১ ইস্যুতে ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো দুইবার সমাধান হয়েছে

পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ২৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ঢাকায় দুই দিনের সরকারি সফরে আসেন। এই সফরে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে, সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান।
১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যু: পাকিস্তানের দাবি
ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক দার দাবি করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী তিনটি অমীমাংসিত ইস্যু—ক্ষমা প্রার্থনা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠানো এবং পাকিস্তানের আর্থিক দায়—দুইবার সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম সমাধান হয় ১৯৭৪ সালে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় সমাধান হয় ২০০০ সালের শুরুর দিকে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বাংলাদেশ সফরের সময়। তাহলে, এই বিষয়গুলো ইতোমধ্যেই সমাধান হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া: অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে অগ্রগতি প্রয়োজন
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবির পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অবশ্যই আমি একমত নই। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে সমস্যাগুলো তাদের দাবির মতো সমাধান হয়ে যেত।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি, তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।” বাংলাদেশের মতে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠানো এবং পাকিস্তানের আর্থিক দায় এখনও সমাধান হয়নি।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক: নতুন দিগন্তের দিকে
ইসহাক দার তার বক্তব্যে বলেন, “ইসলাম বলেছে, হৃদয় পরিষ্কার করতে। আপনারা আপনাদের হৃদয় পরিষ্কার করুন। আমি মনে করি, আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সামনে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।” তিনি আরও জানান, বৈঠকে ছয়টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে গতিশীল করবে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে ঢাকা ও ইসলামাবাদ কাজ করছে।
ইসহাক দারের ঢাকা সফরের অন্যান্য দিক
ঢাকায় আগমনের পর ইসহাক দার বিএনপি, জামায়াত-ই-ইসলামী ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলোতে তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই সম্পর্ককে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফর বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যদিও ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যু এখনও সমাধান হয়নি, তবে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই ইস্যুগুলো সমাধানের পথ সুগম হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সংস্কৃতি বিনিময় ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ইসহাক দারের ঢাকা সফর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। যদিও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী অমীমাংসিত ইস্যু এখনও সমাধান হয়নি, তবে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই ইস্যুগুলো সমাধানের পথ সুগম হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
MAH – 12472 , Signalbd.com