
প্রস্তাবনা
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ঘোষণা দিয়েছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে। জাতিসংঘের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের মুখে এই ঘোষণা আসে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
হামাসের স্পষ্ট বার্তা: “স্বাধীন ফিলিস্তিনই আমাদের লক্ষ্য”
২০২৫ সালের ৩১ জুলাই, হামাস একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, “ফিলিস্তিনের জমি থেকে দখলদারিত্বের অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিরোধ থামানো সম্ভব নয়।” এই ঘোষণায় ফিলিস্তিনের জাতিগত ও রাজনৈতিক দাবি স্পষ্ট হয়েছে, যা বিশ্বদরবারে এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের আহ্বান: অস্ত্র ত্যাগের প্রস্তাব
সাম্প্রতিক সময়ে, জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে হামাসকে শান্তিপূর্ণ পথে অস্ত্র ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বহু দেশ আশা করছিল, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত কমিয়ে আনা যাবে এবং শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। তবে হামাস এই আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
জাতিসংঘের আহ্বানের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আরব দেশ ও পশ্চিমা শক্তি নিজেদের অবস্থান জানায়। সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স, মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ একসঙ্গে একটি ঘোষণাপত্রে সম্মতি প্রকাশ করেছে, যা ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথ অনুসরণের উপর জোর দেওয়া হয়।
তবে হামাস এই ঘোষণাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেনি, কারণ তারা মনে করে এই পথ তাদের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নয়।
জেরুজালেম: ফিলিস্তিনের স্বপ্নের রাজধানী
জেরুজালেমের অবস্থান ফিলিস্তিনি জাতির জন্য শুধু ভূ-রাজনৈতিক নয়, এটি তাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের এক অঙ্গ। ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাস করে, জেরুজালেম তাদের ভবিষ্যতের স্বাধীন রাষ্ট্রের হৃদয়স্থল। আর এই কারণেই হামাস জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা পুনর্বার জোর দিয়ে বলেছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের পটভূমি
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার এই সংঘাতের শিকড় অনেক গভীর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংস্থা শান্তি আলোচনা চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।
হামাস, যা ফিলিস্তিনের প্রধান প্রতিরোধ গোষ্ঠী, তাদের অস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায়। জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সহিংস কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, হামাস তাদের আন্দোলনের ন্যায্যতাকে তুলে ধরে।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সৌদি আরব ও কাতারসহ অনেক আরব দেশ ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেও, ইসরায়েলের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন শান্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়, তবে বাস্তবতা অনেক জটিল।
হামাসের ঘোষণার ফলে ভবিষ্যতে সংঘাত তীব্র হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে কিছু দেশ আবার শান্তির আলোকে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের, যেখানে তারা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা পাবে। হামাসের প্রতিরোধ আন্দোলন অনেকের কাছে আশা ও প্রতিরোধের প্রতীক হলেও, কিছু মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষেও আছেন।
সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা যুদ্ধবিরতি ও শান্তির অপেক্ষায় রয়েছে, যাতে তারা দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে পেতে পারে।
সংঘাত ও শান্তি সন্ধানের দ্বন্দ্ব
- হামাসের অবস্থান: অস্ত্র চালিয়ে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান: শান্তিপূর্ণ পথ অনুসরণ।
- ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব: জেরুজালেমকে রাজধানী করা।
- রাজনৈতিক উত্তেজনা: আরব দেশ ও পশ্চিমা শক্তির মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এই সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ, তবে এই সংকটের মাঝেও শান্তির দরজা খোলা রয়েছে, যদি রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতা সম্ভব হয়।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাসের প্রতিরোধ চলমান থাকবে বলে তারা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী ঘোষণা করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি তাদের মূল লক্ষ্য। বিশ্ব সম্প্রদায়ের শান্তিপ্রিয় আহ্বান থাকা সত্ত্বেও, এই সংকটের উত্তরণ এখনো অনিশ্চিত।
এই সংকট এবং হামাসের অবস্থানের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নজর থাকবে। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
MAH – 12089 , Signalbd.com