বিশ্ব

আফগান সরকার বিদেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে কাতারে

Advertisement

আফগানিস্তান সরকার প্রথমবারের মতো বৈধ ও পেশাগত দক্ষ আফগান শ্রমিকদের বিদেশে প্রেরণ শুরু করেছে। এই উদ্যোগে প্রধানত কাতারকে লক্ষ্য করে প্রথম ধাপে ২ হাজার শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সমর্থনে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়েছে। রাজধানী কাবুলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে সরকারী শীর্ষ নেতারা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ

অনুষ্ঠানে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল মান্নান উমরী, ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর মুহাম্মাদ নাঈমসহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বেসরকারি কর্মসংস্থান সংস্থার ইউনিয়নের সভাপতি হাজি নূরুল্লাহ ফাদাভি এবং শ্রমিক প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।

আফগান শ্রমিক পাঠানোর বৈধ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার অনুষ্ঠানে বলেন,
“আফগানিস্তানের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ বৈধভাবে দক্ষ ও পেশাগত শ্রমিকদের বিদেশে প্রেরণ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং বেকারত্ব কমাতে সহায়ক হবে। আমরা দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে চাই এবং এর মাধ্যমে যুবসমাজের জীবনমান উন্নত করতে পারব।”

তিনি আরও জানান, “গত চার বছর ধরে সরকার দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বড় এবং ছোট জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আফগানদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে।”

শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্য

শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল মান্নান উমরী বলেন,
“আফগান শ্রমিকরা বিশ্বস্ত ও দক্ষ। তারা যেসব দেশে কাজ করবে, সেসব দেশের আইন, সংস্কৃতি ও নিয়ম-কানুন মেনে চলবে এবং আফগান সমাজ ও দেশের সম্মান বহন করবে। এই নতুন কর্মসূচি আফগান যুবকদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে।”

মন্ত্রী জানান, “কাতারের সঙ্গে শ্রমিক প্রেরণের বৈধ চুক্তি একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর পাশাপাশি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, তুরস্ক এবং রাশিয়ার সাথেও সমঝোতা চুক্তির আলোচনা চলছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এসব দেশেও আফগান দক্ষ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে।”

তিনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং বিদেশে অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন।

ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য

ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মুহাম্মাদ নাঈম বলেন,
“কাতার আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু। এই ধরনের উদ্যোগে তাদের সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আফগান শ্রমিকদের বিদেশে নিরাপদ এবং সম্মানজনক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।”

বেসরকারি সংস্থার মতামত

আফগানিস্তানের বেসরকারি কর্মসংস্থান সংস্থার ইউনিয়নের সভাপতি হাজি নূরুল্লাহ ফাদাভি বলেন,
“আফগানিস্তান একটি মেধাবী ও পরিশ্রমী শ্রমশক্তির দেশ। আমরা চাই আমাদের শ্রমিকরা বৈধ ও সুরক্ষিত পথে বিদেশে কাজ করতে পারুক। দীর্ঘসময় ধরে চলা যুদ্ধ, অবকাঠামোর ধ্বংস, খরা এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের ফলে বেকারত্ব বেড়েছে। এই নতুন উদ্যোগ তা কমাতে সাহায্য করবে।”

নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু

আফগান সরকারের নির্দেশে কাবুল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জোনে ২ হাজার দক্ষ শ্রমিককে কাতারে পাঠানোর জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যারা নিবন্ধিত হচ্ছেন, তারা বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

আফগান শ্রমিকদের জন্য বিদেশে কাজের নতুন দ্বার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, তুরস্ক এবং রাশিয়ার সঙ্গে শ্রমিক প্রেরণের জন্য আলোচনা চলমান। এই দেশগুলোতে আফগান শ্রমিকরা বৈধভাবে কাজ করতে পারলে তাদের আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং আফগানিস্তানের অর্থনীতিও উপকৃত হবে।

বৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ হলে, শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অবৈধ অভিবাসন কমে যাবে এবং আফগান শ্রমিকদের মর্যাদা রক্ষা পাবে।

আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব

শ্রমিক প্রেরণের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিদেশে পাঠানো শ্রমিকরা যারা আয় করবেন, তাদের রেমিটেন্স অর্থ দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির প্রবাহ বাড়াবে। এতে বেকারত্ব কমে যাবে এবং দেশের সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

আফগান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিদেশে কর্মসংস্থান নয়, দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। ফলে সমগ্র জাতীয় অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

আফগান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ শ্রমিককে বৈধ পথে বিদেশে পাঠানো হবে। এর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আফগান শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে।

এছাড়াও সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এসব পদক্ষেপ আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সারা বিশ্বের জন্য ইতিবাচক বার্তা

আফগানিস্তানের এই নতুন উদ্যোগ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দেশটির অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। বিশ্বজুড়ে আফগান শ্রমিকরা দক্ষতা ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে। এই প্রক্রিয়া আফগানিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।

 MAH – 12041, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button