রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জঙ্গি যুদ্ধবিমান ঘাঁটি সরিয়ে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন বিমানবাহিনীর এয়ার কমডোর শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকায় থাকা জঙ্গি বিমান ঘাঁটি নিরাপত্তা ও আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। যুদ্ধবিমান পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয়, আর রাজধানীর আকাশ নিরাপত্তার কারণে এই ঘাঁটি ঢাকায় অবস্থিত থাকা প্রয়োজন।
আজ ২৮ জুলাই সোমবার তেজগাঁওয়ের অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটির পুরাতন পিএসসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকায় এই ধরনের ঘাঁটি থাকার ফলে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় এবং আকাশ সীমানা সুরক্ষিত থাকে। বিশ্বের বহু দেশের রাজধানীতেও এ ধরনের বিমান ঘাঁটি অবস্থিত।
সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনা ও তার পরিণতি
গত ২১ জুলাই ঢাকায় দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই শিশুশিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে বর্তমানে ৩৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিমান দুর্ঘটনার সময় পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ ছিল কিনা, তা তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমান বাহিনীর জরুরি সমন্বয় কেন্দ্রের এয়ার কমডোর মো. মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, শেষ পর্যন্ত পাইলট তৌকিরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং তারা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
দুর্ঘটনার পর বিমানবাহিনীর প্রতিশ্রুতি ও সমবেদনা
বিমান বাহিনী হতাহতদের পরিবারের পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এয়ার কমডোর মিজানুর রহমান বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ ও গভীর শোকাহত। উদ্ধার ও সহায়তা অভিযানে অংশ নেওয়া সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
স্কুলের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঘটনার স্থান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন স্কুলে মোট ৭৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৩৮ জন উপস্থিত ছিলেন। স্কুল ভবনের নিচতলায় গ্রিল ছিল, যা শিশুদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছিল। স্কুল ভবনটি একসময় নিচু ছিল, পরে বালি ফেলে মাটি উঁচু করা হয়েছে।
স্কুলের পুনরায় খোলার তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি, তবে যত দ্রুত সম্ভব স্কুল খোলার পরিকল্পনা চলছে।
ঢাকায় জঙ্গি বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকায় বিমান ঘাঁটি থাকার গুরুত্ব শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবিমান পরিচালনার জন্য নয়, এটি দেশের আকাশ সীমানার সুরক্ষার জন্যও অপরিহার্য। বিশ্বের অনেক দেশের রাজধানীতে এ ধরনের ঘাঁটি থাকায় তা নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জানিয়েছে, ঢাকায় জঙ্গি বিমান ঘাঁটি সরানো হলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হবে এবং তা দেশের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই এই সময় কোনও পরিকল্পনা নিয়ে এই ঘাঁটি সরানোর ইচ্ছা নেই।
সামরিক বিমান দুর্ঘটনার বিশদ পর্যালোচনা
বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে ২১ জুলাইয়ের বিমান দুর্ঘটনাটি এক দুঃখজনক অধ্যায়। মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানটি বায়ুসেনার একটি প্রশিক্ষণ বিমানের অংশ ছিল। এই দুর্ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন স্কুল শিক্ষার্থী, যাদের মৃত্যু জাতীয় শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অত্যন্ত দুঃখজনক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিমানবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিমানঘাঁটির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ
ঢাকায় অবস্থিত বিমানঘাঁটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিমানবাহিনী আধিকারিকরা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আকাশ সীমানা রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করা হবে।
অপরদিকে, ঢাকার মতো একটি জনবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীতে বিমানঘাঁটি থাকা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অতীব জরুরি। তাই ঢাকার আকাশে যুদ্ধবিমান ঘাঁটির অবস্থান পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা বর্তমানে নেই।
সংক্ষেপে:
- ঢাকায় থেকে জঙ্গি যুদ্ধবিমান ঘাঁটি সরানো হবে না।
- ২১ জুলাইয়ের বিমান দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত, আহতরা চিকিৎসাধীন।
- পাইলটের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল।
- বিমানবাহিনী দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকবে।
- মাইলস্টোন স্কুলের পুনরায় খোলার পরিকল্পনা চলছে।
- ঢাকায় জঙ্গি বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব অপরিসীম এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।



