বিশ্ব

বাগদাদে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশ নিহত

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে রোববার (২৭ জুলাই) একটি বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে কমপক্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত এবং ১৪ জন মিলিশিয়া সদস্য আটক হয়। ঘটনাটি ঘটে বাগদাদের কার্খ জেলা অবস্থিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভবনে, যেখানে নতুন পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। এই সময় পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস (পিএমএফ) নামে পরিচিত রাষ্ট্রীয় মিলিশিয়া গ্রুপের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ে হামলা চালায়।

কী ঘটেছিল বাগদাদে?

স্থানীয় সময় দুপুরে পিএমএফ সদস্যরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক বিঘ্নিত করে। তারা মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালককে সরিয়ে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। এ সময় নিরাপত্তা কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। পুলিশের জরুরি প্রতিক্রিয়া দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মিলিশিয়া সদস্যরা তাদের ওপর গুলি চালায়, এতে একজন পুলিশ অফিসার নিহত হন এবং কয়েকজন নিরাপত্তা সদস্য আহত হন।

নিহত পুলিশ সদস্যের পরিচয় ও আহতদের অবস্থা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি কিছু সাধারণ কর্মচারীও আছেন। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি শান্ত নয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স (পিএমএফ) — একটি প্রেক্ষিত

পিএমএফ, যা স্থানীয়ভাবে ‘হাশদ আল-শাবি’ নামে পরিচিত, মূলত বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর জোট। এই গোষ্ঠী প্রথমে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গঠিত হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ইরাকের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পিএমএফ-এর বিভিন্ন ইউনিট ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে, বিশেষ করে কাতাইব হিজবুল্লাহ নামক ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী মিলিশিয়া গ্রুপের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া ও সরকারের পদক্ষেপ

ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে, “কোনো গ্রুপ যেন নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর বলপ্রয়োগ করতে না পারে, সরকার তা মেনে নেবে না।” মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে জড়িত ১৪ জন মিলিশিয়া সদস্যকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি এই ঘটনার পর দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন অটুট রাখতে সকল পক্ষকে সহযোগিতা করতে হবে।” জয়েন্ট অপারেশনস কমান্ড জানিয়েছে, আটককৃত মিলিশিয়া সদস্যরা পিএমএফের ৪৫ ও ৪৬ নং ব্রিগেডের, যারা কাতাইব হিজবুল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত।

ইরাকে মিলিশিয়া ও সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ: একটি দীর্ঘ ইতিহাস

ইরাকের রাজনৈতিক পরিসরে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। এই ধরনের ঘটনাগুলো প্রায়ই ঘটে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তোলে। মিলিশিয়াগুলো প্রায়শই নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ এবং প্রভাব বিস্তারের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংঘর্ষ ইরাকের রাজনৈতিক সংকটের এক দৃষ্টান্ত, যেখানে বিভিন্ন শক্তি কেন্দ্র নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে বাধ্য হচ্ছে। ইরানের প্রভাব ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিভাজন মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও ইরাকের ভবিষ্যৎ

বাগদাদের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও নজর কেড়েছে। ইরাকে স্থিতিশীলতা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। তবে ইরানের ঘনিষ্ঠতার কারণে পরিস্থিতি আর্থিক ও সামরিকভাবে আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

বিশ্বমঞ্চে ইরাকের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইরাক মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যার নিরাপত্তা এবং অস্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলের জন্য প্রভাব ফেলে।

বাগদাদের এই সংঘর্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ

সরকার ইতোমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করার পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় সুরক্ষা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে পিএমএফ-এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সকল গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলাই ইরাকের শান্তির জন্য দরকার।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button