গ্লোবাল সুপার লিগ (GSL) ২০২৫ সালের ফাইনালে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স এবং রংপুর রাইডার্সের মধ্যে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স ৩২ রানে জয়লাভ করে তাদের প্রথমবারের মতো গ্লোবাল সুপার লিগের শিরোপা অর্জন করল।
ফাইনালের সংক্ষিপ্ত সারাংশ
গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান করে। দলের ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস ৬৭ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৬৬ রান ও রোমারিও শেফার্ড অপরাজিত ২৮ রানে দলের ইনিংস শক্তিশালী করেন।
তাদের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং লাইন ১৯.৫ ওভার শেষ করে ১৬৪ রানে অলআউট হয়। ইফতিখার আহমেদ ৪৬ এবং সাইফ হাসান ৪১ রান করে দলের স্কোর বাড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু বোলিংয়ে গায়ানা দল আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করে। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ৩ উইকেট নেন এবং ইমরান তাহির ও গুঁড়াকেশ মোতির ২টি করে উইকেট পকেটভর্তি আনেন।
ম্যাচের বিস্তারিত বর্ণনা
ফাইনালের ম্যাচটি গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় গায়ানা আমাজন। ম্যাচের শুরু থেকেই গায়ানা ব্যাটসম্যানরা দৃঢ়তাপূর্ণ শুরু করেন। তবে রংপুরের পেসার খালেদ আহমেদ দ্রুতই এভিন লুইসকে আউট করেন, কিন্তু জনসন চার্লস ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ ধীর কিন্তু নিশ্চিত গতিতে রান তোলেন।
জনসনের অবদান অসাধারণ; মাত্র ৪৮ বল খেলে তিনি ১ ছক্কা ও ১১ চার হাঁকিয়ে ৬৭ রান করেন। গুরবাজও দুর্দান্ত খেলেন, ৩৮ বল খেলে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৬ রান সংগ্রহ করেন। তাদের সুব্যবস্থাপিত জুটিতে গায়ানা শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়।
শেষ ৫ ওভারে রোমারিও শেফার্ড ও শেরফান রাদারফোর্ড দ্রুত রান তোলেন এবং ৫৪ রান যোগ করে ইনিংস জমাট করেন। এই সময় গায়ানার স্পিনার তাব্রেইজ শামসি গুরবাজকে আউট করলেও, সময় মতো দলের রান জোগানো সম্ভব হয়।
রংপুরের ব্যর্থ শুরু ও চাপে থাকা ব্যাটিং
১৯৬ রান তাড়া করতে নেমে রংপুরের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারের শেষে তারা ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান তুলতে সক্ষম হয়। ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান রান আউট হয়ে দ্রুত ফেরেন, পরের ওপেনার সৌম্য সরকারও মাত্র ১৩ রান করেই আউট হন। এরপর মেয়ার্স ৫ রান করেই ফিরে যান।
তবে এরপর চতুর্থ উইকেটে ইফতিখার আহমেদ ও সাইফ হাসান দারুণ জুটি গড়ে দলের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। ৪৪ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তারা দলের জয় তাড়া করে যান। কিন্তু ১৩তম ওভারে সাইফের রান আউট হয়ে যাওয়ায় রংপুরের মনোবল খানিকটা ভেঙে পড়ে। এরপর তারা দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে।
১৪ থেকে ১৭ ওভারের মধ্যে মাত্র ২৩ রান তোলার পথে ৪ উইকেট হারানো রংপুরের জন্য বিশাল ধাক্কা। এরপরই ইফতিখার ও মাহিদুল ইসলামও আউট হয়ে যান। ২০ তম ওভারের শেষ বলেই কামরুল ইসলাম আউট হয়ে রংপুরের ইনিংস শেষ হয়।
গায়ানা ওয়ারিয়র্সের বোলিংয়ের জোরালো অবদান
গায়ানার বোলাররা শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন। বিশেষ করে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ৪ ওভারে ৩ উইকেট নেন, যা রংপুরের ব্যাটিং ধ্বংসের প্রধান কারণ ছিল। পাশাপাশি স্পিনার ইমরান তাহির ও গুঁড়াকেশ মোতির ২টি করে উইকেট শিকার করে রংপুরের রান রোধ করেন।
রংপুরের বোলিংয়ে খালেদ আহমেদ ১ উইকেট নেন, কিন্তু অন্য বোলাররা রান রোধে সফল হতে পারেননি। গায়ানার ব্যাটসম্যানরা সময়মতো রানের গতি ধরে রাখায় তারা সহজেই বড় রান সংগ্রহ করে।
গ্লোবাল সুপার লিগের ইতিহাসে গায়ানার প্রথম শিরোপা
গত বছর গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরে শিরোপা জেতা রংপুর রাইডার্স এবারও শিরোপা জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু ফাইনালে তাদের শুরু থেকেই ব্যর্থতা তাদের জয়ের সুযোগটাকে ধ্বংস করে দেয়।
অন্যদিকে, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও মেধাবী খেলোয়াড়দের কারণে শেষ পর্যন্ত লিগের শিরোপা নিশ্চিত করে। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, যিনি দলের জয় নিশ্চিত করতে বড় অবদান রাখেন। টুর্নামেন্টসেরা হন স্পিনার ইমরান তাহির।
গ্লোবাল সুপার লিগ ২০২৫ এর বিশেষত্ব
গ্লোবাল সুপার লিগ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট, যেখানে বিভিন্ন দেশের তারকা ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করেন। এই লিগে খেলা মান, প্রতিযোগিতার তীব্রতা ও ভক্তদের উৎসাহ অন্য যেকোনো টুর্নামেন্টের তুলনায় বেশী।
২০২৫ সালের আসরে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স ও রংপুর রাইডার্সের ফাইনাল ছিল উত্তেজনাপূর্ণ এবং দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স:
২০ ওভার: ১৯৬/৪
জনসন চার্লস ৬৭, গুরবাজ ৬৬, রোমারিও শেফার্ড ২৮*
ইফতিখার ১/১২, শামসি ১/২৮, খালেদ ১/৪৪
রংপুর রাইডার্স:
১৯.৫ ওভার: ১৬৪
ইফতিখার ৪৬, সাইফ ৪১, মাহিদুল ৩০
ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ৩/৩৭, ইমরান তাহির ২/৩৯
গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের ঐতিহাসিক জয় গ্লোবাল সুপার লিগের ২০২৫ সালের ফাইনালে ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। আগামী বছর এই লিগ আরও উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।



