শিক্ষা

১৬ বছর পর ফিরছে প্রাথমিকে বৃত্তি, যেসব বিষয়ে হবে পরীক্ষা

Advertisement

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও চালু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ মোট পাঁচটি বিষয়ে হবে পরীক্ষা, প্রতিটি বিষয়ে থাকবে ১০০ নম্বর।

পরীক্ষার ঘোষণা ও বিস্তারিত নির্দেশনা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক জরুরি নির্দেশনার মাধ্যমে দেশের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়েছে, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চারদিনে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দেবে। বিষয়গুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান। প্রতিটি বিষয়ে পূর্ণমান থাকবে ১০০ এবং পরীক্ষার সময় নির্ধারিত হয়েছে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য।

কেন বন্ধ হয়েছিল বৃত্তি পরীক্ষা?

২০০৯ সালে দেশে চালু হয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই)’। ওই সময় থেকেই বন্ধ হয়ে যায় বহু বছরের প্রচলিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা।

বিগত সময়ে এই বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাসিক হারে বৃত্তি পেতো, যা তাদের শিক্ষা খরচে সহায়ক ছিল। পিইসিই চালুর পর অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাবিদরাও বৃত্তি পরীক্ষার পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

কারা অংশ নিতে পারবে, কীভাবে হবে নির্বাচন?

বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি সব শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হবে এই পরীক্ষার জন্য।

এতে মেধার ভিত্তিতে প্রকৃত প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে এবং আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো করার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এই পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা পেতে শুরু করেছেন।

শিক্ষকদের মতামত ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এই উদ্যোগটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করবে। দীর্ঘ সময় পর বৃত্তি পরীক্ষা চালু হওয়ায় আমরা সবাই উৎসাহিত।”

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ পরীক্ষা নিয়ে উত্তেজিত হলেও, অনেকে নতুনভাবে প্রস্তুতি নেওয়া নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায়ও রয়েছে। তবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় সেই দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

বৃত্তির সুযোগ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মেধাতালিকার ভিত্তিতে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে আর্থিক সহায়তা পাবে, যা ভবিষ্যতে তাদের উচ্চশিক্ষা বা মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার জন্য অনুপ্রেরণা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বৃত্তি শিক্ষায় অসমতা দূর করতে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের তুলে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘদিন পর এই পরীক্ষার পুনরায় চালুর ফলে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

সারসংক্ষেপ  

১৬ বছর পর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফিরে আসা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাখাতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একদিকে যেমন নতুন চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে এটি হতে পারে আত্মবিশ্বাস ও সাফল্যের নতুন পথ।

তবে, পরীক্ষা ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কিনা এবং এর ফলাফল কেমন হবে—তা নির্ভর করছে শিক্ষা দপ্তরের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর।

শেষ প্রশ্ন থেকেই যায়—এই পরীক্ষার মাধ্যমে কি সত্যিই মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হবে? সময়ই তা বলে দেবে।

এম আর এম – ০৩৯৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button