বিনোদন

‘পিস টিভি’ চালু করতে সরকারকে আইনি নোটিশ

Advertisement

 ডা. জাকির নায়েক পরিচালিত ‘পিস টিভি বাংলা’ আবার চালুর উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সরকারকে পাঠিয়েছেন আইনি নোটিশ। ২০১৬ সালে বন্ধ হওয়া চ্যানেলটি ফের সম্প্রচারের অনুমতির জন্য চলছে তৎপরতা।

আইনি উদ্যোগের বিস্তারিত

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আশরাফুজ্জামান সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ‘পিস টিভি বাংলা’ পুনরায় চালুর দাবিতে। রোববার (১৩ জুলাই) তিনি এ নোটিশ পাঠান। এতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবী জানান, ‘পিস টিভি বাংলা’ একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক টিভি চ্যানেল, যা বহু বছর ধরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে। চ্যানেলটি পুনরায় চালু হলে অসংখ্য দর্শক উপকৃত হবেন বলে তার দাবি।

পিস টিভি বন্ধের পেছনের ইতিহাস

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার হোলি আর্টিসান বেকারিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরপরই ‘পিস টিভি’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই হামলায় জড়িত এক যুবক ছিলেন ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত বলে জানানো হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ সরকার স্যাটেলাইট এবং ক্যাবল নেটওয়ার্ক থেকে চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও একই কারণে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এই ইসলামিক চ্যানেলটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দর্শকগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বর্তমান পরিস্থিতি ও জাকির নায়েকের বক্তব্য

গত ১৯ আগস্ট নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা. জাকির নায়েক জানান, পিস টিভি এখনও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চালু রয়েছে—বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও চাইনিজ ভাষায়।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার পিস টিভির ডাউনলিংকের অনুমতি তুলে নিয়েছে। ফলে ক্যাবল অপারেটররা সেটি সম্প্রচার করছে না। তবে স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচার চলমান আছে।”

জাকির নায়েক আরও বলেন, “বাংলাদেশে পিস টিভি বাংলার সম্প্রচারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে কয়েক দিনের মধ্যেই পুনরায় সম্প্রচার শুরু করা সম্ভব হবে।”

সমাজে চ্যানেলটির ভূমিকা ও গ্রহণযোগ্যতা

‘পিস টিভি বাংলা’ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাভাষী মুসলিম দর্শকদের মধ্যে ধর্মীয় বার্তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছে। দাওয়াত, ইসলামের ইতিহাস, শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা, ও প্রশ্নোত্তর পর্বসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান এই চ্যানেলের মূল আকর্ষণ।

অনেক দর্শক দাবি করেন, পিস টিভির অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাঁরা ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেন, যা মূলধারার চ্যানেলগুলো থেকে পাওয়া যায় না।

পুনরায় চালুর উদ্যোগে সম্ভাবনা ও বিতর্ক

আইনজীবীর আইনি নোটিশ এবং জাকির নায়েকের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে, বাংলাদেশে ‘পিস টিভি বাংলা’ পুনরায় চালু হতে পারে। তবে তা কত দ্রুত হবে, কিংবা সরকার অনুমতি দেবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সমালোচকদের মতে, অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সরকারের উচিত হবে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। অন্যদিকে, সমর্থকরা বলছেন—জনগণের ধর্মীয় চাহিদা পূরণে চ্যানেলটি চালুর অনুমতি দেওয়া জরুরি।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জাকির নায়েক ও পিস টিভি

ভারতের নাগরিক ডা. জাকির নায়েক বর্তমানে মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছেন এবং সেখানে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার ও ঘৃণাত্মক বক্তব্যের অভিযোগে তদন্ত চলমান।

যদিও মালয়েশিয়ার সরকার এখনো তাঁকে ফেরত পাঠানোর কোনও উদ্যোগ নেয়নি, তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার কর্মকাণ্ডকে ঘিরে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দিক ও প্রতিক্রিয়া

এখন দেখার বিষয় হলো—বাংলাদেশ সরকার আইনজীবীর নোটিশের জবাব কী দেয় এবং আদৌ কি ‘পিস টিভি বাংলা’ পুনরায় সম্প্রচারের অনুমতি পায়।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার চ্যানেলটির উপকারিতা ও পূর্বের বিতর্ক—উভয়ই বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিষয়টি ইতোমধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।


“আমরা আশা করছি সরকার ধর্মীয় সম্প্রচারের স্বাধীনতা রক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে”— আইনজীবী মো. আশরাফুজ্জামান।

সারসংক্ষেপ  

‘পিস টিভি বাংলা’ পুনরায় চালুর দাবিতে আইনি পদক্ষেপ সমাজে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে কী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।

 এম আর এম – ০৩১৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button