চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ‘গ্রেস মার্কস’ বা বাড়তি নম্বরের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। শিক্ষার্থীরা খাতায় যা লিখেছে, কেবল সেই অনুযায়ীই নম্বর পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। উদার নীতির অবসান ঘটিয়ে এবারই প্রথম ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে।
ঘটনার বিস্তারিত
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, “শিক্ষার্থীরা খাতায় যা লিখেছে, নম্বরও পেয়েছে ঠিক ততটুকুই। কোনো ‘গ্রেস মার্কস’ বা অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, এবার সম্পূর্ণরূপে ‘শূন্য উদারনীতি’ অনুসরণ করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। পূর্বের মতো নম্বর বাড়িয়ে শিক্ষার্থীর গ্রেড উন্নত করার প্রথা এবার বন্ধ করা হয়েছে।
আগের ফলাফলে কী হতো?
গত কয়েক বছর ধরে ‘গ্রেস মার্কস’ ছিল একটি প্রচলিত নিয়ম। বিশেষ করে যদি কোনো শিক্ষার্থী ৭৮ বা ৭৯ নম্বর পেত, তবে তা বাড়িয়ে ৮০ করে দেওয়া হতো যেন তারা উচ্চতর গ্রেড অর্জন করতে পারে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী স্বল্প নম্বর পেয়ে উচ্চ জিপিএ অর্জনের সুযোগ পেত।
কিন্তু এবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বোর্ডগুলোকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় — কোনো ছাড় বা নম্বর বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
ফল প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ৭৯ নম্বর পেয়ে কেবল ১ নম্বরের জন্য গ্রেড মিস করাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
তবে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “এই ফলই খাঁটি ফল। এখানে কোনো সংশয় নেই। যা প্রাপ্য, শিক্ষার্থীরা ঠিক তাই পেয়েছে।”
অনেক অভিভাবক আবার এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা কেবল পাস করার জন্য নয়, সঠিকভাবে শেখার প্রতি গুরুত্ব দেবে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ: এবার ফল কেমন হলো?
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কম। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, এটি কৃত্রিমভাবে বাড়ানো বা কমানো হয়নি।
সফলভাবে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া ও নম্বর বাড়ানোর সুযোগ না রাখার কারণেই প্রকৃত ফল উঠে এসেছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন,
“সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল — প্রকৃত ফলাফলই প্রকাশ করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি বোর্ড কঠোরভাবে নির্দেশনা অনুসরণ করেছে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিশ্লেষণ
শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ‘গ্রেস মার্ক’ পদ্ধতি অনেক সময় মেধাবীদের প্রতি অন্যায় হয়ে দাঁড়াত।
একজন শিক্ষার্থী পরিশ্রম করে ৮০ পেলে এবং আরেকজন ৭৯ পেয়ে বাড়তি নম্বর পেয়ে সেই একই গ্রেড পেলে, প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না।
তারা বলছেন, “এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছভাবে মূল্যায়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে একসাথে এত বড় পরিবর্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন ছিল।”
“শিক্ষার্থীরা খাতায় যা লিখেছে, সে অনুযায়ী নম্বর পেয়েছে। ৭৯ নম্বর পাওয়া কেউ ৮০ পায়নি — এটা এবার হয়নি।”
— অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
সারসংক্ষেপ
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, এবার কোনো শিক্ষার্থীকে বাড়তি নম্বর বা ‘গ্রেস মার্ক’ দেওয়া হয়নি। এমনকি কেউ ৭৯ নম্বর পেলেও তাকে ৮০ দেওয়া হয়নি। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফলাফলে এবার কোনো প্রকার নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
গ্রেস মার্কস প্রথার অবসান একটি নতুন দৃষ্টান্ত। যদিও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশ এতে হতাশ, তবে শিক্ষা বোর্ডের মতে, এটা ভবিষ্যতের জন্য একটি শুদ্ধ এবং মেধানির্ভর পথ।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়— শুধু নম্বরের শুদ্ধতা নয়, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে আর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
এম আর এম – ০২৭৫, Signalbd.com



