টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্লাবিত ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুততার সঙ্গে সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত সামরিক বাহিনীর সব ইউনিট।
সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও প্রস্তুতি
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। ফেনী সেনানিবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে সেখানে ট্রাইশার্ক বোট, আউটবোর্ড ইঞ্জিন (ওবিএম), লাইফ জ্যাকেট ও জরুরি উদ্ধার সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল টিম জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্গত এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
বন্যার ভয়াবহতা
গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা পানির ফলে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল সম্পূর্ণরূপে প্লাবিত হয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া প্রবল জলের চাপে ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
ফলে প্রায় শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুর্গত এলাকায় অন্ধকারে দিন কাটছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও দুর্বল হওয়ায় বাইরে যোগাযোগ স্থাপন করতেও সমস্যা হচ্ছে।
ত্রাণ কার্যক্রম ও প্রশাসনের ভূমিকা
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে দিচ্ছে। ফেনী জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর একাধিক সমন্বয় সভা ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় সেনা সদস্যরা ট্রাইশার্ক বোটের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবারদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে। পাশাপাশি, চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে।
“দুর্যোগের এই মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের দায়িত্ব”—ফেনী সেনানিবাসের এক কর্মকর্তা
পরিস্থিতির প্রভাব ও চলমান অবস্থা
ফেনী–ফুলগাজী এবং ফেনী–ছাগলনাইয়া সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। স্কুল ও কলেজগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত মানুষজন প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসাসেবার অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রয়েছেন।
স্থানীয় ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্যাকবলিত এলাকায় উপস্থিত থেকে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী দল ও সামাজিক সংগঠনও ত্রাণ বিতরণে অংশ নিচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে। ফলে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বহু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, যারা উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের যৌথ প্রচেষ্টায় দুর্গত মানুষের জন্য সাহায্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি কেমন হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে আবহাওয়া এবং উজান থেকে নতুন করে পানি আসার ওপর। তবে, আগেভাগে গৃহীত পদক্ষেপগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এই সংকট মোকাবেলা অনেক সহজ হবে।
এম আর এম – ০২৭২, Signalbd.com



