দেশে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমলেও এখনও প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে মোট ৩৮৪টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ও পরিসংখ্যান
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনে।
একই সময়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২১ জনে পৌঁছেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২২ জন। নতুন সংক্রমণ দেখা দিলেও এদিন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
চলতি বছরের করোনা পরিস্থিতি
চলতি বছরে করোনায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫৬৯ জন। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনজনেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম, তবুও নতুন করে সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার খবরে সতর্ক হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার হার বাড়ানো এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সংক্রমণের হার ও লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ
মোট মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুষদের মৃত্যুহার বেশি। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮২৯ জন পুরুষ এবং ১০ হাজার ৬৯১ জন নারী করোনায় মারা গেছেন। এতে বোঝা যায়, পুরুষদের মধ্যে সংক্রমণ ও জটিলতার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি।
বর্তমানে দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এই হারগুলো বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তুলনা করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে প্রস্তুতি
বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরন যেমন KP.2 বা FLiRT ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এটি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক রয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন প্রবেশপথে স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সকল হাসপাতালে জরুরি ওয়ার্ডে করোনা ইউনিট প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত: ‘বুস্টার ডোজ ও সচেতনতা জরুরি’
স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদিও সংক্রমণ কম, তবুও গণপরিবহন, জনসমাগমস্থল এবং অফিসে সচেতনতা না বাড়ালে পুনরায় একটি ঢেউ আসতে পারে।”
তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা এখনো তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি, তাদের দ্রুত তা গ্রহণ করা উচিত। সেইসঙ্গে, সর্দি-কাশি হলে পরীক্ষা করা, মাস্ক পরা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান
সরকারি পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, গণপরিবহন, স্কুল, অফিস ও বাজারে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
“নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে বলে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” —স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন
করোনা সংক্রমণ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেটি যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, এমন ভাবার সুযোগ নেই। বরং পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ ধরনের ভাইরাস নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে। তাই সাধারণ জনগণকে এখনো সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে যদি সংক্রমণের হার বাড়ে, তবে আবারও গণটেস্টিং, স্কুল-কলেজে সতর্কতা এবং ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন চালু হতে পারে।
এম আর এম – ০১০৮, Signalbd.com