অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা সম্প্রসারণে ২১ কোটি টাকার জমি কেনা

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুট ও কনফেকশনারি কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৯ জুন, রোববার কোম্পানিটি মোট ৭০২ ডেসিমেল জমি কেনার কথা শেয়ারধারীদের কাছে ঘোষণা করেছে। এই জমির আনুমানিক মূল্য ২১ কোটি টাকার মতো।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে জমি কেনার বিস্তারিত
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় ৬৬৮ ডেসিমেল জমি ক্রয়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করবে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় ৩৩.৫ ডেসিমেল জমি কিনবে, যার জন্য প্রায় ১.১৭ কোটি টাকা ব্যয় অনুমান করা হচ্ছে। কোম্পানিটি এসব জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয় করবে এবং সব জমি তাদের নিজস্ব নামে নিবন্ধন করা হবে। জমি কেনার প্রক্রিয়াটি চারটি ভাগে সম্পন্ন হবে।
এই জমি কেনার পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে কারখানা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান 확보 করা। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা বাড়াতে ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের বাজার অবস্থা ও ব্র্যান্ড পরিচিতি
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের বিস্কুট ও কনফেকশনারি শিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। দেশের বাজারে তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন এনার্জি, এনার্জি প্লাস, নাটি, টিপ প্রভৃতি বিস্কুট পাওয়া যায়। এছাড়াও পালস ব্র্যান্ডের ক্যান্ডিসহ বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনারি পণ্য বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে, যা গ্রাহকদের কাছে বেশ পরিচিত ও প্রিয়।
১৯৮৯ সালে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। আজ পর্যন্ত কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে তাদের উৎপাদন ও বিক্রয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের অবস্থা ও বিনিয়োগকারীরা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৬। কোম্পানিটির শেয়ারের বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে শেয়ারের ৩২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১৫২ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ বা আড়াই টাকা বৃদ্ধি।
আর্থিক প্রতিবেদন: বিক্রয় ও মুনাফার ধারাবাহিকতা
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ২,৬০০ কোটি টাকা। এই সময়ে কর ও সব খরচ বাদ দিয়ে কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৮৩ কোটি টাকার উপরে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) কোম্পানিটির ব্যবসার পরিমাণ হয়েছে প্রায় ২,১৪৩ কোটি টাকা, যেখানে নিট মুনাফা ১৫৯ কোটি টাকার কাছাকাছি। শুধুমাত্র প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসার পরিমাণ ৬৫৩ কোটি টাকা ও নিট মুনাফা ৪৩ কোটি টাকা।
এখনো পর্যন্ত এই মুনাফা ও বিক্রয়ের ধারাবাহিকতা দেখে বলা যায়, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ঘটছে, যা তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনার জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
শিল্পে জমি বিনিয়োগের গুরুত্ব
কারখানা সম্প্রসারণের জন্য জমি কেনা হলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশের শিল্প ও উৎপাদন খাতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল রাখতে নতুন কারখানা স্থাপন এবং বিদ্যমান উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা দু’টো দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করা মানে উৎপাদন খাতকে আরও শক্তিশালী করা।
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের এই বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিল্পবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিস্কুট ও কনফেকশনারি খাতের বাজার বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের বিস্কুট ও কনফেকশনারি বাজার দ্রুত বর্ধনশীল। বাড়তে থাকা ক্রেতাদের চাহিদা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ মানের খাদ্যদ্রব্যের চাহিদাও বাড়ছে। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন পণ্য ও ব্র্যান্ড নিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। দেশীয় ও বৈদেশিক বাজারে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে সম্প্রতি তারা উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির জমি কেনার ঘোষণা আসার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পষ্ট যে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আশাবাদী। বিশেষ করে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের মতো শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হলে কোম্পানির লাভের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী সময়ে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নতুন কারখানা ও উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহ দেশের শিল্পখাতের উন্নয়ন হবে।
সংক্ষেপে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ২১ কোটি টাকার জমি ক্রয় এবং কারখানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ দেশের বিস্কুট ও কনফেকশনারি শিল্পের জন্য সুখবর। ব্যবসায়িক দিক থেকে তাদের উন্নতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই বিনিয়োগ। শেয়ারবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।