বিশ্ব

ইরানিদের রক্ত বৃথা যাবে না: খামেনি

Advertisement

ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে নিহত ইরানি সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের রক্ত বৃথা যাবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এই ক্ষতি ইরানিদের মনোবল ভাঙতে পারবে না; বরং প্রতিরোধের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কঠোর হুঁশিয়ারি

তেহরানে এক বৈঠকে খামেনি বলেন, ইসরাইলি হামলায় যেসব ইরানি কমান্ডার, বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি হামলার প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে এবং ইরানের সামরিক, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আরও গতি পাবে।
খামেনি বলেন, “শত্রুর আক্রমণ আমাদের থামাতে পারবে না। বরং এই ক্ষতিই আমাদের প্রতিরোধ ও উন্নয়নের পথকে শক্তিশালী করে তুলবে।”

সামরিক ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে নতুন গতি

সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সামরিক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার গতি আরও বাড়ানো হবে। তিনি জানান, দেশের তরুণ প্রজন্ম ও গবেষকদের উৎসাহিত করে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন ধাপ যোগ করা হবে।
তার মতে, এই সংকট ইরানকে আরও আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

তেহরানের কূটনৈতিক উদ্যোগ

সাম্প্রতিক হামলার সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইরানি কূটনীতিকদের সক্রিয় ভূমিকার কথাও উঠে এসেছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, রাশিয়া, চীন, ব্রিকস ও এসসিও-এর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করা হবে।
তিনি বলেন, “যুদ্ধের মাঝেও আমরা আন্তর্জাতিক মহলে সক্রিয় কূটনীতি চালিয়ে গেছি। এর ফলেই বহু দেশ আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”

আন্তর্জাতিক সমর্থন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ইসরাইলি আগ্রাসনের ১২ দিনের মধ্যে ১২০টিরও বেশি দেশ ইরানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি ইরানি কূটনীতিকদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের কর্মকর্তারা দিন-রাত কাজ করেছেন, অনেকেই কয়েকদিন ধরে বাড়িতেও যাননি। তাদের প্রচেষ্টার ফলেই আন্তর্জাতিক সমর্থন বেড়েছে।”

পটভূমি: ইসরাইল-ইরান সংঘাতের তীব্রতা

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইসরাইলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় ইরানের সামরিক ঘাঁটি, গবেষণা কেন্দ্র ও কৌশলগত স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংঘাতে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
ইতিহাসে আগে বহুবার ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ চললেও সাম্প্রতিক এই ঘটনা সরাসরি সংঘাতের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।

ইরানের প্রতিরোধের অঙ্গীকার

খামেনির বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ইরান এই ক্ষয়ক্ষতিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে চায়। তিনি জানান, “আমাদের জনগণ কখনো ভীত হবে না। এই যুদ্ধ আমাদের একতা ও প্রতিরোধের মানসিকতা আরও শক্তিশালী করেছে।”
তিনি আরও বলেন, দেশের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক অগ্রগতি থেমে থাকবে না। শত্রুর প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে যথাযথভাবে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হতে পারে। পাশাপাশি, আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে তেহরান তাদের কৌশলগত অবস্থান আরও মজবুত করার চেষ্টা করবে।
তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন দিনগুলোতে উভয় পক্ষের কর্মকৌশলের ওপর।

একজন কূটনৈতিক বিশ্লেষকের মতে:
“খামেনির বার্তা শুধু ইসরাইল নয়, পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করেই দেওয়া হয়েছে। এই বার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইরান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত প্রতিরোধে নামবে।”

শেষ কথা 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ও কূটনৈতিক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, ইসরাইল এই সতর্কবার্তাকে কিভাবে গ্রহণ করে এবং আন্তর্জাতিক মহল এই উত্তেজনা প্রশমনে কী ভূমিকা নেয়।

এম আর এম – ০৫৪১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button