বানিজ্য

নতুন রেকর্ড গড়লেন ওয়ারেন বাফেট: দান করলেন ৬০০ কোটি ডলারের শেয়ার

বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ও বর্ষীয়ান বিনিয়োগজ্ঞ ওয়ারেন বাফেট এবার দান করলেন অসাধারণ এক পরিমাণ অর্থ — ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার। এই দান তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ার থেকে করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় বার্ষিক অনুদান হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ওয়ারেন বাফেটের দানের আকার: এক নজরে

গত শুক্রবার বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের মোট ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার পাঁচটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে প্রদান করেছেন। এই দাতব্য সংস্থাগুলোতে অন্যতম প্রধান গেটস ফাউন্ডেশন। বাকি চারটি সংস্থা পরিচালিত হয় বাফেটের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা। এর ফলে তার মোট দানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের উপরে।

বাফেটের দানের বিশদ:

  • গেটস ফাউন্ডেশন পেয়েছে ৯৪ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার
  • সুসান থমসন বাফেট ফাউন্ডেশন পেয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৪ শেয়ার
  • বাফেটের তিন সন্তান হাওয়ার্ড, সুজি ও পিটারের নেতৃত্বে থাকা তিনটি দাতব্য সংস্থা (হাওয়ার্ড জি বাফেট ফাউন্ডেশন, শেরউড ফাউন্ডেশন, নোভো ফাউন্ডেশন) পেয়েছে প্রতি সংস্থায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৬ শেয়ার

সম্পদের দান: বাফেটের মানবিক অবদান

ওয়ারেন বাফেট তার ৯৪ বছরে পা দিয়েছেন, কিন্তু এখনও মানবহিতৈষী কাজের জন্য নিজের সম্পদের বড় অংশ দান করে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৬ সাল থেকে সম্পদ দান শুরু করেন এবং প্রতি বছর নিয়মিত এমন বড় পরিমাণ দান করে আসছেন।

গত বছর, তিনি নিজের উইল পরিবর্তন করে মৃত্যুর পর সম্পদের ৯৯.৫ শতাংশ দাতব্য ট্রাস্টে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ট্রাস্ট পরিচালনা করবেন তার তিন সন্তান: সুসি (৭১ বছর), হাওয়ার্ড (৭০ বছর), এবং পিটার (৬৭ বছর)। এর মাধ্যমে বাফেট তার অর্জিত সম্পদ মানবতার সেবায় অব্যাহত রাখতে চান।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক গুরুত্ব

বাফেটের দান শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, এটি বিশ্বব্যাপী দাতব্য কাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত। গেটস ফাউন্ডেশন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এই তহবিল সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

এর আগে গত বছরের জুনে বাফেট ৫৩০ কোটি ডলার এবং নভেম্বরে আরও ১১৪ কোটি ডলার দান করেছিলেন। এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে ধনীদের মধ্যে মানবিক অবদান কতটা জরুরি এবং তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে।

ওয়ারেন বাফেট: জীবনী ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

ওয়ারেন বাফেট, যিনি “ওরাকল অফ ওমাহা” নামে খ্যাত, দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের ভাগ্যই গড়ে তুলেননি, বরং দাতব্য কাজে তার অবদানও অসামান্য। ধনী হওয়ার পরও তিনি অনেকে থেকে ভিন্ন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন সম্পদ শেয়ার করাটা সামাজিক দায়িত্ব।

বাফেটের দান নিয়ে বিশ্বমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া

রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাফেটের এই দানকে এক বিরল মানবিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেছে। অনেক বিশ্লেষক বলেন, ধনী ব্যক্তিদের জন্য এটি দাতব্য কাজের একটি নতুন মাইলফলক। বিশেষত বিশ্বে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মধ্যে এই ধরনের উদাহরণ মানবতার জন্য আশার আলো।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দাতব্য কাজের অবদান

বাফেটের এই উদারতা শুধু অর্থ দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি নিয়মিত মানবকল্যাণমূলক কাজের উন্নয়নে নজর রাখেন। তার পরবর্তী পরিকল্পনাগুলোতে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন রয়েছে।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ার বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা নেই বাফেটের। তিনি চান তার সম্পদের অধিকাংশই মানবকল্যাণে ব্যয় হোক। তার এই দানের মাধ্যমে দাতব্য কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং এটি তার পরিবার নিয়ন্ত্রণ করবে।

কেন বাফেটের দান এত গুরুত্বপূর্ণ?

  • বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য অনুদান: তার মোট দান এখনো ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক দানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • মানবতাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতীক: বাফেট প্রমাণ করেছেন ধনী ব্যক্তিরাও তাদের সম্পদ দিয়ে সমাজের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
  • পরিবারের মাধ্যমে দাতব্য কাজের ধারাবাহিকতা: তার তিন সন্তানের মাধ্যমে দাতব্য সংস্থাগুলো কার্যক্রম চালু থাকবে, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে।

ওয়ারেন বাফেটের ৬০০ কোটি ডলার দান শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক ঘটনা নয়, এটি মানবিকতার জন্য এক বড় বার্তা। এই দানের মাধ্যমে তিনি সারা বিশ্বের ধনী ও সফল ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত করেছেন তাদের সম্পদের বড় অংশ মানবকল্যাণে ব্যয় করার জন্য।

Signalbd.com এ আমরা বাফেটের এই উদারতার গল্প তুলে ধরছি, যা আমাদের সমাজের জন্য এক দৃষ্টান্ত। আশা করি, এই সংবাদটি পড়ে আরও অনেক ধনী ব্যক্তি তাদের সম্পদের কিছু অংশ মানবতার কল্যাণে দান করবেন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button