বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণবাহী যানবাহন প্রবেশ বন্ধ, এখন পর্যন্ত ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করে দিয়েছে, যার ফলে সেখানে জরুরি খাদ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ত্রাণবাহী সামগ্রী হামাস সন্ত্রাসীদের হাতে পড়ছে, তাই সাময়িকভাবে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো বন্ধ রাখা হয়েছে।

গাজায় ত্রাণ সরবরাহে অবরোধ

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী এখন একটি পরিকল্পনা করছে যাতে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ নিরাপদ ও সঠিকভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যায়। এই পরিকল্পনা না হওয়া পর্যন্ত গাজায় কোনো ত্রাণবাহী যান প্রবেশ করতে পারবে না। এর আগে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ অনেক দিন বন্ধ ছিল।

গত চার সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিতর্কিত সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) গাজায় ত্রাণ বিতরণ করে আসছে। কিন্তু ত্রাণ আনতে গাজায় প্রবেশের পথে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ত্রাণবাহী যানগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বানিয়ে তাড়া চালানো হয়েছে।” এই হামলায় ৪ হাজার ৬৬ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন এবং ৩৯ জন অনাহারে নিখোঁজ রয়েছেন।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ ও হামাসের নিয়ন্ত্রণ

মিডল ইস্ট আই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন গভির গাজায় ত্রাণ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। ইসরায়েলি সরকারও বারবার দাবি করেছে, গাজায় সরবরাহকৃত পণ্য ও খাদ্যের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হামাসের হাতে রয়েছে। এই অভিযোগকে ভিত্তি করে ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।

অন্যদিকে, গাজার প্রভাবশালী কিছু পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি কমিটি এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, “এই ধরনের দাবি মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি অজুহাত মাত্র।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার উদ্বেগ

গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যার ভয়াবহ অবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দ্রুত ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানবিক সংকট দ্রুত সমাধান না হলে গাজায় মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার সতর্ক করেছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকলে শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থদের মৃত্যু বাড়বে এবং সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র

গাজা উপত্যকায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। সেখানে চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে বিদ্যুৎ, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা সবই মারাত্মক সংকটে রয়েছে। এই অবস্থা ক্রমেই সাধারণ মানুষকে খাদ্য ও চিকিৎসার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এবং প্রবীণরা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং নিরাপদ পানীয় পানির অভাব বেড়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় অপুষ্টি ও সঙ্কটজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘাতের পটভূমি

গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এধরনের পদক্ষেপ নতুন নয়। ইসরায়েল বহু বছর ধরে গাজা উপত্যকাকে অবরোধ করে রেখেছে। তারা বলছে, হামাস সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রমে বাধা দিতে এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখতে এই অবরোধ অপরিহার্য। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অবরোধকে অবৈধ ও মানবিক দুর্দশার কারণ হিসেবে দেখছে।

তবে গাজায় প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিরা জীবন বাঁচাতে সংগ্রাম করছে, আর বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা মানবিক সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের ত্রাণ অবরোধ এই প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে।

ভবিষ্যৎ কি?

বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গাজার এই মানবিক সংকট দ্রুত সমাধানের দাবি উঠছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অনেক দেশের সরকার পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার তাগিদ দিচ্ছে বিশ্ব।

তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অব্যাহত উত্তেজনাপূর্ণ, ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ এবং সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংক্ষেপে:

  • গাজায় ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করেছে।
  • হামাসের হাতে ত্রাণের চলে যাওয়ার অভিযোগ ইসরায়েলের।
  • এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত।
  • ৪ হাজার ৬৬ জন আহত, ৩৯ জন অনাহারে নিখোঁজ।
  • আন্তর্জাতিক মহল মানবিক সংকটের জন্য উদ্বিগ্ন।
  • স্পেনের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
  • গাজার সাধারণ মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button