জাতীয়

সরকার, জনগণ ও পাইলটদের উদ্দেশে জরুরি বার্তা হ্যাকার গ্রুপের

বাংলাদেশের একটি এয়ারলাইনস এবং এর পাইলটদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, সোনা পাচার, মাদক ব্যবসা, জাল লাইসেন্স, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে এক রহস্যময় হ্যাকার গ্রুপ। নিজেদের পরিচয় দিয়েছে “অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ” নামে।

এই চাঞ্চল্যকর বার্তাটি এসেছে একটি ভিডিওর মাধ্যমে, যা ২৬ জুন সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। তিনি দাবি করেন, ভিডিওটি তাকে গত সপ্তাহে পাঠানো হয় এবং কিছু প্রমাণ যাচাই করার পর তিনি তা জনগণের সামনে আনেন।

এটি কেবল একটি ভিডিও নয়—বরং একটি সিস্টেমিক অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রতিবাদ, যা আভ্যন্তরীণ তথ্য ও হুমকির সুরে রচিত এক সতর্কতা বার্তা।

হ্যাকার গ্রুপটি কারা?

ভিডিওতে নিজেদের পরিচয় দেয় “অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ” নামে একটি সংগঠন, যারা নিজেদের একটি জিও-পলিটিক্যাল হ্যাকার চেইন হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ভিডিওতে বলা হয়, তারা “এক বছরের বেশি সময় ধরে” বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর নজরদারি করে আসছে।

তাদের দাবি অনুযায়ী, তারা শুধু পত্রিকার খবরের উপর নির্ভর করেনি—বরং তারা হ্যাক করেছে সংশ্লিষ্টদের ইনবক্স, ব্যাংক একাউন্ট, ফ্লাইট ম্যানিফেস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, কল রেকর্ডিং, এমনকি হোটেল রুমের বিল ও ভিডিও

ভিডিওতে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ

হ্যাকার গ্রুপের ভিডিও বার্তায় যেসব গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে, তা নিচে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করা হলো:

যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন

  • এক দশকের বেশি সময় ধরে পাইলটরা তাদের নারী সহকর্মীদের হয়রানি করে আসছে।
  • মাদক খাইয়ে অচেতন করে ভিডিও ধারণ, পরে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
  • অনেককে বাধ্য করা হয়েছে পতিতাবৃত্তিতে।

অর্থ পাচার ও চোরাচালান

  • আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ব্যবহার করে সোনা ও মাদক পাচার।
  • পাইলটরাই পাচারকারীদের মূল সহায়তাকারী, যারা ইউনিফর্ম ব্যবহার করে নিরাপত্তা ফাঁকি দেয়।
  • পাচার কাজে যুক্ত কর্মকর্তারা ভাগ হিসেবে নগদ অর্থ গ্রহণ করে।

ভুয়া লাইসেন্স ও নিরাপত্তা ঝুঁকি

  • একাধিক পাইলট ভুয়া CPL (Commercial Pilot License) দিয়ে ফ্লাইট চালিয়েছে।
  • যাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেও কর্তৃপক্ষ মুনাফার স্বার্থে তা গোপন রেখেছে।

গোপন চক্র ও রাজনৈতিক আশ্রয়

  • এই অপরাধচক্রকে রক্ষা করে আসছে একদল অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা, পাইলট ইউনিয়নের নেতা, এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য
  • এই কর্মকর্তারা প্রমাণ গুম করে, ধর্ষকদের আড়াল করে, এবং কমিশনের বিনিময়ে অপরাধীদের রক্ষা করে।

মধ্যম স্তরের কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত

হ্যাকারদের ভাষ্যমতে, শুধু উঁচুপর্যায়ের নয়—মধ্যপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে HR ও অপারেশনস বিভাগের কর্মীরাও এই অপরাধের অংশ।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ:

  • যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া
  • সততার সাথে কাজ করতে চাওয়া কর্মীদের হুমকি দেওয়া
  • যাত্রী তালিকায় ভুয়া নাম সংযোজন
  • ঘুষের বিনিময়ে অভিযোগ প্রত্যাহার

এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

হ্যাকার গ্রুপটি সরাসরি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করে বলেছে:

“তোমরা কেবল নীরব দর্শক নও। তোমরা এই অপরাধের অংশীদার। তোমাদের নাম আমাদের ফাইলে আছে। আর খুব শিগগিরই সেগুলো পৌঁছে যাবে জনগণের হাতে।”

তারা অভিযোগ করে যে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জেনে শুনেই বারবার সতর্কতা উপেক্ষা করেছে এবং অপরাধীদের রক্ষা করেছে ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে।

সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি ও দাবি

হ্যাকারদের বক্তব্য:

“সরকার যদি এখনো ব্যবস্থা না নেয়, তবে সরকারের নীরবতা হয়ে উঠবে এই অপরাধের সহায়তা।”

তাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:

  1. যৌন নিপীড়ন, পাচার ও জাল লাইসেন্সে জড়িতদের বিচার
  2. সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা
  3. পাইলটদের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল
  4. অপরাধীদের রাজনৈতিক ও পেশাগত রক্ষাকর্তাদের প্রকাশ ও বিচারে আনা
  5. এয়ারলাইনসের পুরো কাঠামোতে সংস্কার

জনগণের প্রতি আহ্বান

ভিডিও বার্তায় বলা হয়:

“এই পাইলটরা আপনাদের রক্ষক নয়। তারা ককপিটে বসে থাকা হিংস্র শিকারি। তাদের পতন অনিবার্য। আর সেই পতন আনতে হবে আপনাদের হাতেই।”

জনগণকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং চুপ না থাকে।

নারী কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা

“তোমরা দুর্বল নও, যোদ্ধা। তোমাদের নীরবতা সম্মতি নয়। আমরা আছি তোমাদের পাশে। তোমাদের গল্প আমরা বহন করব। বিচার আসছে।”

সার–সংক্ষেপঃ 

এই ভিডিও বার্তা একটি দেশের বিমান চলাচল খাতকে ঘিরে এমন এক অভ্যন্তরীণ নোংরা বাস্তবতার পর্দা ফাঁস করল, যা কেবল নৈতিক সংকট নয়—বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও গণবিশ্বাসের জন্য এক বিপর্যয়।

সরকার, এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত এই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যথায়, দেশের বিমান চলাচল শুধু আকাশেই নয়, বিশ্বাসের মাটিতেও মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

এম আর এম – ০০৬৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button