শিক্ষা

নিরাপদ ও স্বচ্ছ এইচএসসি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে

বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্ভুল করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর ভাসানটেক সরকারি কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, অতীতের প্রশ্নপত্র ফাঁসের গ্লানিকর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের পরীক্ষা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে

অতীতের প্রশ্নফাঁসের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে

ড. রফিকুল আবরার বলেন, “পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের কারণে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা আরও বেশি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও নির্ভুল করার জন্য কঠোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এসএসসি পরীক্ষার মতোই এইচএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

পরীক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা

শিক্ষা উপদেষ্টা পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “পরীক্ষার দিন যেন কেউ কোনো ঝামেলা বা বিঘ্নবিপত্তির সম্মুখীন না হয়, সে জন্য সময় নিয়ে বের হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যাতে তারা নির্বিঘ্নে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।”

পরীক্ষার সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পরিচালনার জন্য মোট ২৮০০টিরও বেশি কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে মহিলা শিক্ষার্থীর সংখ্যাই অধিকাংশ। শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, “পরীক্ষার সময় সকল কেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র সুরক্ষা এবং পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

রেজাল্ট প্রকাশের পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

পরীক্ষা শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। ড. রফিকুল আবরার বলেন, “শিক্ষার্থীদের ফলাফল যাতে সময়মতো প্রকাশিত হয়, সে লক্ষ্যে কম্পিউটারাইজড প্রক্রিয়া উন্নত করা হয়েছে। যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা দেরি ছাড়াই তাদের ফলাফল জানতে পারেন।”

প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার

বর্তমানে পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যা পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এছাড়া প্রশ্নপত্রের ডিজিটাল সরবরাহ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফাঁসের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চলছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি সচেতনতা ও সহযোগিতার আহ্বান

ড. রফিকুল আবরার সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান, “পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। কোনো প্রকার অনৈতিক কাজ বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা যেন না হয়।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে এবং তারা যেন সর্বোচ্চ মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে সফল হতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

এইচএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ নির্ধারণ করে। তাই পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নিরাপদ করা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতিটি দিক বিবেচনা করা হচ্ছে।

সার্বিক দিক থেকে বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে, শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও আধুনিক ব্যবস্থার ব্যবহার পরীক্ষার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করছে। এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সামগ্রিক সারাংশ

  • ২৮০০+ পরীক্ষাকেন্দ্রে ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।
  • পরীক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি
  • প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রযুক্তি ব্যবহার ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
  • জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
  • পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য সময় নিয়ে চলার আহ্বান।
  • ফলাফল দ্রুত প্রকাশের জন্য কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থা গ্রহণ।

এই সংবাদের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দেশের শিক্ষা বিভাগ প্রতিটি পরীক্ষাকে নির্ভুল, নিরাপদ ও স্বচ্ছ করতে সবরকম উদ্যোগ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যেন নিশ্চিন্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেটাই প্রধান লক্ষ্য।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button