এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫ শুরু কাল, অংশ নিচ্ছে ১২.৫১ লাখ শিক্ষার্থী
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। পরীক্ষা নেওয়া হবে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮১ হাজার কম। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে কম হওয়ায় অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন। বিশেষ করে গত দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া প্রায় সোয়া চার লাখ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেও এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না।
নবম ও দশম শ্রেণি পাশ করেও অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সফল হওয়া সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট, কোভিড মহামারির প্রভাব এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পরিবর্তন অন্যতম কারণ হিসেবে সামনে এসেছে।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। গতবারের তুলনায় এ বছর এই বোর্ডগুলোর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার কমেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজারের বেশি হলেও, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার কমেছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। এখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সাত হাজারের মতো কমেছে।
পরীক্ষার কেন্দ্র ও অন্যান্য প্রস্তুতি
সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এর কারণ পরীক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানো।
আগামী বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিক্রম গত বছরের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। তারা ২০২৬ সালের মে-জুন মাসে এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
এই পরীক্ষাগুলো হবে পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, অর্থাৎ সকল বিষয়ে পূর্ণ সময় ও পূর্ণ নম্বরের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে।
বিস্তারিত বিশ্লেষণ
এইচএসসি পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনেক আগেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে করোনার পরপরই শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন ধারা এসেছে। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা নিয়েছে, যা এই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক প্রভাব ফেলেছে।
তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, কর্মসংস্থানের উদ্বেগ এবং উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির প্রতি অনিচ্ছাও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি পর্যায় থেকে এই বিষয়গুলোর সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও পরামর্শ
পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের উচিত নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, মানসিক চাপ কমানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
পরীক্ষার আগে ভালো বিশ্রাম ও সঠিক পুষ্টি গ্রহন করা জরুরি।
পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো উপস্থিত হওয়া এবং সঠিক নির্দেশনা মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শিক্ষা নীতি
সরকারি পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সার্বিক প্রভাব
এইচএসসি পরীক্ষার সুষ্ঠু ও সফল আয়োজন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ।
শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শুধুমাত্র পরীক্ষার একটি পর্যায় নয়, বরং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল, যেখানে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবনের পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সকল সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালন জরুরি।
শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা রইল, যাতে তারা তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও মেধা দিয়ে সফল হয়।
