বগুড়ায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল ক্লিনিক, ফ্রিজে পাওয়া গেল কাঁচা মাংস ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

বগুড়ার ঠনঠনিয়া এলাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। ক্লিনিকটি ছিল লাইসেন্সবিহীন, সেখানে ছিল পশুর কাঁচা মাংস ও মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারি ওষুধ। শেষ পর্যন্ত ক্লিনিকটি সিলগালা করে ২৩টি চিকিৎসা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হয়ে আসছিল একটি বেসরকারি ক্লিনিক। মঙ্গলবার (২৪ জুন) সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। অভিযানে উঠে আসে ভয়ংকর সব অনিয়মের তথ্য, যা সাধারণ মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাস্থল ও অভিযান পরিচালনার বিবরণ:
সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদুল ইসলাম এবং সদর সেনা ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট ফাহাদের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এস এম নূর-ই-শাদী।
অভিযানকালে দেখা যায়, ঠনঠনিয়ার “জমজম ইসলামিয়া ক্লিনিক” নামক এই প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের বৈধ স্বাস্থ্যসেবা লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছিল। তদন্তকারীরা ক্লিনিকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দেখেন চরম অব্যবস্থা ও নোংরা পরিবেশে চলছিল চিকিৎসাসেবা।
ভয়াবহ অনিয়ম: ফ্রিজে পশুর কাঁচা মাংস ও ওষুধ
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় ছিল ক্লিনিকের ফ্রিজের ভেতর সংরক্ষিত ছিল কোরবানির কাঁচা মাংস, যা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মারাত্মক উদাহরণ। এছাড়া ক্লিনিকের স্টোর রুমে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারি ওষুধ।
লেফটেন্যান্ট ফাহাদ বলেন,
“চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার ফ্রিজে মাংস রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা রোগীদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।”
সিলগালা ও জব্দকৃত সরঞ্জাম:
মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্লিনিকটি তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করে দেয়া হয়। ক্লিনিক থেকে ২৩টি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মালিকের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া:
ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনায় বগুড়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই অবাক হয়েছেন, কীভাবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান এতদিন ধরে নজরের বাইরে ছিল।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,
“আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না। যেখানে আমরা চিকিৎসার আশায় যাই, সেখানে এমন অনিয়ম চলছে!”
গত কয়েক বছরে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে এমন অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
তবে এবার যে অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে, তা অতীতের তুলনায় অনেক ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলে সেখানে রোগীদের জীবন সবসময় ঝুঁকির মুখে থাকে। তারা আরও কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসনের বার্তা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদুল ইসলাম জানান,
“আমরা নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত রাখব। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা যেন মানসম্মত হয় তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই অভিযান।”
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অভিযান আরও জোরালোভাবে চলবে।
সার-সংক্ষেপ :
বগুড়ায় লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকে এমন ভয়ংকর অনিয়ম উঠে আসার পর বিষয়টি প্রশাসনের পাশাপাশি জনসাধারণের চোখও খুলে দিয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ধরনের প্রতিষ্ঠান কিভাবে এতদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল?
জনগণের জীবন রক্ষায় এমন অভিযান চলতেই থাকবে—এটাই প্রত্যাশা।এম আর এম – ০০৩৭, Signalbd.com