শিক্ষা

বিশ্ব রাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরও পিছিয়েছে। গবেষণা, শিক্ষা মান এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অগ্রগতি না থাকায় দেশের এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অবস্থান

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশ করেছে তাদের ইমপ্যাক্ট রাঙ্কিংয়ে ২০২৫। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০০১–১৫০০ এর মধ্যে। অথচ ২০২২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ৬০১–৮০০ এর মধ্যে অবস্থান করেছিল। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়।

টিএইচই র‌্যাঙ্কিং মূলত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। এবারের তালিকায় ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ২,৫২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের আরও সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় একই ক্যাটাগরিতে এসেছে, যা দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মানসম্মত শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার কারণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে র‌্যাঙ্কিং বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশেষত মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি ৪) সূচকে বাকৃবির অবস্থান ক্রমেই নিম্নমুখী। ২০২২ সালে যেখানে ৩০১–৪০০ এর মধ্যে ছিল, সেখানে ২০২৪ সালে নেমে এসেছে ৪০১–৬০০ এবং ২০২৫ সালে আরও পিছিয়ে ৬০১–৮০০ এ অবস্থান করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন,
“আমাদের শিক্ষকরা গবেষণা করছেন, কিন্তু অনেকেই তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সঠিকভাবে আপলোড করছেন না। এর ফলে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে তথ্য ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ না হওয়াটাও এর অন্যতম কারণ।

আশার আলো: কিছু সূচকে অগ্রগতি

যদিও সামগ্রিক র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়েছে, কিছু সূচকে সামান্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। জলজ জীবন (এসডিজি ১৪) সূচকে বাকৃবি ১০১–২০০ এর মধ্যে রয়েছে। দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি ১) সূচকে অবস্থান ২০১–৩০০ এর মধ্যে।

এছাড়া লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব (এসডিজি ১৭) সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৪ সালে যেখানে অবস্থান ছিল ১০০১–১৫০০, সেখানে ২০২৫ সালে উঠে এসেছে ৬০১–৮০০ এর মধ্যে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান

ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বাংলাদেশের ২০টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ১০১–২০০ এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

অন্যদিকে, কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) প্রকাশিত ২০২৬ সালের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুপস্থিত ছিল। গত চার বছরেও কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে বাকৃবি স্থান পায়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অবস্থা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি বড় ধরনের সতর্ক সংকেত।

কী করতে হবে উন্নতির জন্য?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে:

  • গবেষণার মান বৃদ্ধি এবং তা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আপডেট ও তথ্য হালনাগাদ
  • সহশিক্ষা কার্যক্রম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রমের তথ্য প্রচার
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি

অধ্যাপক আসাদুজ্জামান সরকার বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করতে। ভবিষ্যতে এর সুফল মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।”

উপসংহার

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক বড় ধরনের বার্তা বহন করছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় কতটা দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

এম আর এম – ০০০৭ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button