যশোরে করোনায় দুজনের মৃত্যু, পরীক্ষা কিট সংকট সামলাতে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি জোরদার

যশোরে গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু খবরের পর জনমনে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে, জেলার করোনা পরিস্থিতি এখনও তেমন খারাপ নয়। মৃত্যুর পিছনে করোনা ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা ছিল। পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার জন্য কয়েকদিন ধরে চলছিল কিটের অভাব, যা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে। জেলা হাসপাতালগুলোতেও করোনা মোকাবিলায় নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
যশোরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুই জন
গত বুধবার সকালে যশোরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৬৮ বছর বয়সী শেখ আমির হোসেনের মৃত্যু হয়। তিনি কয়েকদিন আগে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় তাঁর করোনা পরীক্ষাও করা হয়, যেখানে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সেই দিনের রাতেই মনিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাঠি গ্রামের ৪২ বছর বয়সী ইউসুফ হোসেনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইউসুফ হোসেন শ্বাসকষ্ট ও কিডনির জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরের অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়, কিন্তু করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই রাতেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে আরও একজন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করোনার দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তুতি ও হাসপাতালের ব্যবস্থা
করোনা সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করায় যশোর জেনারেল হাসপাতাল রেড ও ইয়েলো জোনে রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রেড জোনে তিনটি কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ছয়জন রোগী থাকতে পারবেন। ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ৩০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের মধ্যে ১৫টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে করোনা রোগীদের জন্য।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, দুজন মৃত রোগী সাধারণ রোগী হিসেবে ভর্তি ছিলেন, তবে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
করোনা পরীক্ষার কিট সংকট কাটিয়ে ওঠা শুরু
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যশোরে করোনা পরীক্ষার কিটের অভাবে নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে ২ হাজার করোনা পরীক্ষা কিট জেলা হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়েত জানান, এখন থেকে জেলা হাসপাতালসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও নিয়মিত করোনা পরীক্ষা শুরু হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি
যশোরের সিভিল সার্জন মো. মাসুদ রানা জানান, জেলার আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বেনাপোল স্থলবন্দরের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনা র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১২ হাজার কিটের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
যদিও দেশে করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট রয়েছে, তবে আশার কথা হলো কিছু কিট দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন
করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) নতুন করে আরটিপিসিআর ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এই ল্যাবে কোভিড পরীক্ষা শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এটি জেলা ও আশপাশের অঞ্চলে পরীক্ষার চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের আশ্বাস: আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই
যশোর সিভিল সার্জন মো. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, “দুইজন রোগীর মৃত্যুতে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা যেহেতু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, তবে তাঁদের অন্যান্য গুরুতর শারীরিক সমস্যা ছিল। করোনাই মৃত্যুর মূল কারণ বলে ধরা যাচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যশোরে করোনা সংক্রমণ: বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ভাবনা
যশোরসহ সারাদেশে করোনা সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলা এবং নিজে ও পরিবারকে সচেতন রাখা জরুরি।
যশোরের মতো জেলায় করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কার্যক্রম ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জনগণকেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
- মাস্ক পরা ও নিয়মিত হাত ধোয়া
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
- জনসমাগম এড়িয়ে চলা
- সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণ করা
- উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করা
যশোরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হলেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানায়। করোনার নতুন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা শুরু করেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।