টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর শুরু হতে চলেছে ২০২৫ সালের জুন মাস থেকে, যেখানে বাংলাদেশের টেস্ট দলকে দিয়ে সূচনা করা হবে। এই আসরে বাংলাদেশ খেলবে মোট ছয়টি সিরিজ, যার মধ্যে তিনটি সিরিজ হবে নিজের মাঠে এবং তিনটি সিরিজ হবে বিদেশের মাটিতে। এই সিরিজগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ, যেখানে তারা অতীতের পারফরম্যান্স থেকে আরও ভালো করতে চেষ্টা করবে।

বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পথচলা: অতীত থেকে বর্তমান

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় ২৫ বছর পার করেছে, কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে তারা এখনও পর্যন্ত সাফল্যের জন্য সংগ্রাম করছে। প্রথম দুইটি চক্রে (২০১৯-২১ এবং ২০২১-২৩) বাংলাদেশ কোনো বড় জয় পায়নি। দ্বিতীয় চক্রে একমাত্র মাউন্ট মঙ্গানুইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় ছিল যা দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে আজও জীবন্ত।

তৃতীয় চক্র (২০২৩-২৫) বাংলাদেশকে দেখতে পেলাম একটু উন্নতির দিকে। ১২টি টেস্ট ম্যাচে ৪টি জয় এবং দুই দলকে ছাড়িয়ে সাত নম্বরে অবস্থান করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করা ছিল বড় অর্জন। তবে এখনও অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, যা নতুন চক্রে আরো স্পষ্ট হবে।

২০২৫-২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ: বাংলাদেশের সিরিজসমূহ

২০২৫-২৭ চক্রের প্রথম সিরিজ শুরু হচ্ছে ১৭ জুন থেকে, যেখানে বাংলাদেশ গল (শ্রীলঙ্কা) মাঠে প্রথম টেস্ট খেলবে। দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট হবে ২৫ জুন কলম্বোয়। এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশের নতুন চক্রের যাত্রা শুরু হবে।

বাংলাদেশের পূর্ণ সিরিজের সূচি নিম্নরূপ:

• ২০২৫: শ্রীলঙ্কা (দুই ম্যাচ, বিদেশ)
• ২০২৬ মার্চ: পাকিস্তান (দুই ম্যাচ, ঢাকা)
• ২০২৬ আগস্ট: অস্ট্রেলিয়া (দুই ম্যাচ, অস্ট্রেলিয়া)
• ২০২৬ অক্টোবর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দুই ম্যাচ, ঢাকা)
• ২০২৬ নভেম্বর: দক্ষিণ আফ্রিকা (দুই ম্যাচ, বিদেশ)
• ২০২৭ ফেব্রুয়ারি: ইংল্যান্ড (দুই ম্যাচ, ঢাকা)

এই ছয়টি সিরিজই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হবে, যেখানে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ।

ফাইনাল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৭ সালের জুন মাসে, যেখানে লর্ডস স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফাইনালে উঠার জন্য বাংলাদেশকে আরও অনেক কাজ করতে হবে, কারণ শক্তিশালী দলগুলো যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ও শ্রীলঙ্কা অংশ নিচ্ছে।

প্রতিপক্ষদের বিশ্লেষণ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা

• শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ, যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মিশ্র। শ্রীলঙ্কা ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী দল হলেও বাংলাদেশ তাদের মাঠে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম।
• পাকিস্তান: গত চক্রে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় দিয়েছে আত্মবিশ্বাস। আগামী সিরিজেও এটি বাংলাদেশের বড় সুযোগ।
• অস্ট্রেলিয়া: কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। ২০২৬ সালে প্রথমবার বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।
• ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা: শক্তিশালী বোলিং ও ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত দল। বাংলাদেশকে কঠিন লড়াই দিতে হবে।
• ইংল্যান্ড: ২০১৬ সালের পর প্রথম ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশ মাঠে আমন্ত্রণ জানাবে ২০২৭ সালে।

বাংলাদেশের টেস্ট দলের নেতৃত্ব ও উন্নয়ন

নাজমুল হোসেন আগেই বলে দিয়েছেন, “গত চক্রে চারটি ম্যাচ জিতেছি, এবার আরও দুই-তিনটি জয় লক্ষ্য।” দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, তাইজুল ইসলাম ও অন্যান্য তরুণ খেলোয়াড়রা দলের পারফরম্যান্স উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

পয়েন্ট সিস্টেম ও টুর্নামেন্ট ফরম্যাট

বর্তমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট পদ্ধতি অপরিবর্তিত রয়েছে:

• জয়: ১২ পয়েন্ট
• ড্র: ৪ পয়েন্ট
• টাই: ৬ পয়েন্ট

মোট ২৭টি সিরিজ খেলা হবে, যার মধ্যে ৭১টি ম্যাচ রয়েছে। প্রত্যেক সিরিজের ম্যাচ সংখ্যা দুই থেকে পাঁচের মধ্যে হবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও লক্ষ্য

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও অধিনায়করা লক্ষ্য রেখেছেন—শক্তিশালী দল হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের অবস্থান শক্ত করা। পরবর্তী দুই বছর বাংলাদেশে এবং বিদেশে উন্নত খেলা প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা ক্রিকেট বিশ্বের উচ্চতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।