সৌদি যুবরাজ সালমানকে ফোনে কী বললেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকা মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে গতকাল শনিবার ফোনালাপ হয়। এই ফোনালাপে তারা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সংকট, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার অবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
তুরস্কের সরকারি যোগাযোগ বিভাগ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। দুই শক্তিশালী নেতা বিশ্ব পরিস্থিতির জটিলতা ও ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দেন।
ইসরায়েল: স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় হুমকি
ফোনালাপে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান স্পষ্টভাবে বলেন, ইসরায়েল এবং তার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমান আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনি আরও বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক হামলার মাধ্যমে এই হুমকি পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে। এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের অবৈধ ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা
এরদোয়ান আন্তর্জাতিক সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অবিচলিত দখলদারিত্ব ও গণহত্যার বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা নীরবতা বজায় রেখেছে। এই নীরবতা ইসরায়েলকে আরও বেশি স্বাধীন ও বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ধরণের নীরবতা এবং অনাদর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।”
পারমাণবিক শান্তি প্রচেষ্টা বিপন্ন
এরদোয়ান জানান, ইসরায়েলের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার প্রক্রিয়া চলছিল। ইসরায়েল এই হামলার মাধ্যমে ঐ শান্তি প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই হামলার ফলে পারমাণবিক গ্যাস বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে, যা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি।
বড় সংকট এড়ানোর হুঁশিয়ারি
এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য আর কোনো বড় সংকট সহ্য করতে পারবে না। তিনি বলেন, “যদি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়, তবে অনিয়মিত অভিবাসনের বিপুল ঢল এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে।” তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
সৌদি আরবের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সৌদি আরবের ভূমিকাও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই আলাপের তাৎপর্য
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও গভীর প্রভাব ফেলে। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ থেকে শুরু করে নানা রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতা সৃষ্টি করছে। এই সংঘাতের জেরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্বের প্রধান শক্তিধর দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত এড়াতে বারবার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে সন্ত্রাসবাদের পুনরুজ্জীবন এবং শরণার্থী সংকটও প্রকট হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব ও করণীয়
বিশ্ব সমাজের প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আহ্বান জানান, ইসরায়েলের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় শুধু মৌখিক বিবৃতি নয়, বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
তুর্কি প্রেসিডেন্টের এই ফোনালাপ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন তীব্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা। সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো শক্তিধর দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগই পারে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে একটি বড় ধাপ হিসেবে এই আলাপকে দেখা হচ্ছে। তবে তা পূর্ণ সফল হতে পারবে কি না, সেটি নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর।