বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব: ইসরায়েলের সম্মতি, হামাসের প্রত্যাখ্যান

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েল সম্মতি জানালেও, হামাস এতে আপত্তি তুলেছে। এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাজায় চলমান সংঘাত নিরসন, জিম্মি ও বন্দি বিনিময়, এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। তবে হামাসের মতে, প্রস্তাবটি তাদের মূল দাবিগুলো উপেক্ষা করেছে।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তু

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার মূল দিকগুলো নিম্নরূপ:

  • ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি: এই সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে।
  • জিম্মি ও বন্দি বিনিময়: হামাস ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে; এর বিনিময়ে ইসরায়েল ১,২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে এবং ১৮০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেবে ।
  • মানবিক সহায়তা: যুদ্ধবিরতি শুরু হলে গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিবারকে এই বিষয়ে অবহিত করেছেন । তবে, ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা নেতানিয়াহুর এই দ্রুত সম্মতিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। হারেৎজ পত্রিকার কলামিস্ট আকিভা এলদার বলেন, “ইসরায়েল সাধারণত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে প্রথমে সম্মতি দেয় না। নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ বিশ্ববাসীকে দেখানোর চেষ্টা হতে পারে যে তিনি শান্তি চান, কিন্তু হামাস বাধা সৃষ্টি করছে।”

হামাসের আপত্তি ও প্রতিক্রিয়া

হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য বাসেম নাঈম রয়টার্সকে জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। প্রস্তাবে যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের কোনো নিশ্চয়তা নেই।” হামাসের আরেক নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, “প্রস্তাবে ইসরায়েলের আক্রমণ থামানো, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং অবরুদ্ধ উপত্যকায় অবাধ মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত নেই।”

মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজায় চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু । ইসরায়েলি বাহিনী আল-আওদা হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে, যা মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায় অবাধ মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি সংঘাত নিরসনের একটি প্রচেষ্টা হলেও, হামাসের মূল দাবিগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইসরায়েলের দ্রুত সম্মতি ও হামাসের আপত্তি এই সংকটের জটিলতা প্রকাশ করে। মানবিক সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েল সম্মতি জানালেও, হামাস এতে আপত্তি তুলেছে। গাজায় চলমান মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক জটিলতা এই প্রস্তাবের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংঘাত নিরসনে উভয় পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য ও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button