বিশ্ব

ইসরায়েলি গুলি ও পদদলনের ঘটনায় গাজায় নিহত ৩

দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত ও অবরোধে চরম খাদ্যসংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহে ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি হেলিকপ্টার। ত্রাণ সংগ্রহে আসা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে হুড়োহুড়ি ও পদদলনের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

ত্রাণ সংগ্রহে এসে মৃত্যু: আতঙ্কের মধ্যেই হেলিকপ্টার থেকে গুলি

স্থানীয় সময় দুপুরে নতুন মানবিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) রাফাহ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, কিছু সময়ের মধ্যেই ভিড়ের চাপে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তারপরই ইসরায়েলি হেলিকপ্টারগুলো ঘটনাস্থলের আকাশে চক্কর দিতে শুরু করে এবং ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি ও ফ্লেয়ার ছোড়ে। এতে আতঙ্কিত মানুষ ছুটোছুটি শুরু করলে পদদলনের ঘটনা ঘটে।

জিএইচএফের প্রস্তুতির ঘাটতি ও বিতর্কিত ভূমিকা

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গত ২৬ মে প্রথমবারের মতো খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু সংস্থাটির পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, জিএইচএফের কর্মীরা কয়েক লাখ মানুষের চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অব্যবস্থা দেখে বিকেলের দিকে তারা কার্যক্রম বন্ধ করে সরে যায়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক জেক উড বিতরণ কার্যক্রম শুরুর আগের দিন, ২৫ মে, পদত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, জিএইচএফ নিরপেক্ষতা, মানবতা ও স্বাধীনতার নীতিমালা অনুসরণ করতে পারছে না। তার মতে, সংস্থাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে। রাতে এক বক্তব্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “ত্রাণকেন্দ্রে সাময়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, তবে দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে, ইসরায়েল জিএইচএফের কার্যক্রম সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেকে মনে করছেন, ত্রাণকেন্দ্রকে সামরিক কৌশলের অংশ বানিয়ে গাজার জনগণকে একটি পরিকল্পিত ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।

‘সহায়তার নামে নজরদারি’—বিতর্ক ঘনীভূত

গাজার অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করলেও হঠাৎ করেই জিএইচএফকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ফিলিস্তিনিদের কাছে অত্যন্ত সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এই সংস্থাটি মূলত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গঠিত এবং মানবিক সহায়তার আড়ালে নজরদারি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গাজার মানুষের অভিযোগ: ত্রাণ নয়, মৃত্যুফাঁদ

বিক্ষুব্ধ গাজার বাসিন্দারা বলছেন, এমন একটি অপ্রস্তুত ও অবিশ্বস্ত সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ একদিকে যেমন বিশৃঙ্খলার জন্ম দিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। তাদের অভিযোগ, ত্রাণের বদলে মিলছে গুলি আর পদদলন।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট ও মানবিক সংকট

রাফাহ অঞ্চলে চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও সীমান্ত অবরোধের কারণে গত ১১ সপ্তাহ ধরে সেখানে চরম খাদ্য ও ওষুধ সংকট চলছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রমই গাজার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিতরণ কার্যক্রম নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি, হামলা আর মৃত্যু।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button