আল–আকসা প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর উগ্র ইসরায়েলিদের হামলা

২৬ মে ২০২৫, জেরুজালেম দিবসের মিছিলে অংশ নেওয়া উগ্র ডানপন্থী ইসরায়েলিরা পুরনো শহরের দামেস্ক গেট দিয়ে প্রবেশ করে পবিত্র আল–আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংস আচরণ চালায়। হামলাকারীরা ফিলিস্তিনি দোকান, পথচারী, এমনকি শিশুদেরও লক্ষ্য করে বিভিন্ন বস্তু ছুঁড়ে মারা এবং ‘ডেথ টু আরাবস’, ‘মে ইয়োর ভিলেজ বার্ন’ জাতীয় উত্যক্ত স্লোগান দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ আপর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিয়ে হামলাকারীদের পাশে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেরুজালেম দিবসের প্রেক্ষাপট
ইসরায়েলি ক্যালেন্ডারে ২৬ মে “জেরুজালেম দিবস” হিসেবে উদযাপিত হয়, যা ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখলের স্মরণসভা। প্রতি বছর এই দিনে রাজধানীর পুরনো শহরে জাতীয়ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী মিছিল করে, শহর “স্বেচ্ছায়” ইসরায়েলের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতীকী প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য নিয়ে। মিছিলের রুট সরাসরি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ায় প্রায়শই উত্তেজনা তৈরি হয়।
দামেস্ক গেট থেকে মিছিলের শুরু
সকাল থেকেই দামেস্ক গেটে কয়েক হাজার উগ্র মিছিলকারী ‘ইস্রায়েলি পতাকা’ হাতে মিছিল ফেলতে শুরু করে। তাদের মধ্যে একজন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও ছিলেন, যিনি আগে আল–আকসা প্রাঙ্গণে গিয়ে провокацион কর্মকাণ্ড চালিয়েছেনR। মিছিলে ‘আরবদের মৃত্যু হোক’—এরকম উগ্র স্লোগান উচ্চারণ করলে পথচারীরাও বাধা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ার বদলে হামলাকারীদের ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছিল।
আল–আকসা এবং UNRWA স্থাপনায় ঢুকে পড়া
মিছিলের এক তৎপর অংশ আল–আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে ও পাশের UNRWA (ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি) কার্যালয়ের অভ্যন্তরে সশস্ত্র উপস্থিতি দেখায়। এতে প্রশাসনিক স্থাপনার নিরাপত্তা ভেঙে পড়ে। হামলাকারীদের মধ্যে ইসরায়েলি সংসদ সদস্যও থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এই ঘটনায় UNRWA’র কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়, কারণ ইসরায়েল সংস্থাটিকে পূর্বজেলাসহ অধিকৃত ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ করেছিল।
প্রতক্ষ্যদর্শীদের বয়ান
আল–জাজিরার সংবাদদাতা নিদা ইব্রাহিম ভিডিও বিশ্লেষণে বলেন,
“ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উগ্র ইসরায়েলি নাগরিকেরা ফিলিস্তিনি দোকানে হামলা চালাচ্ছে ও বস্তু ছুঁড়ে মারছে। স্পৃস্টভাবে ইসরায়েলি পুলিশের অবহেলা স্পষ্ট।”
এএফপি’র সংবাদদাতা তুলে ধরেছেন, পুলিশ মিছিলে অন্তত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করলেও হামলাকারীদের ব্যাপক অন্তর্জাল অবরুদ্ধ করতে পারেনি।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
পুরনো শহরের মুসলিম কোয়ার্টারে বসে থাকা ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী, পথচারী ও স্কুলগামী শিশুদের মানসিক উৎকণ্ঠার বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন:
“প্রত্যাশিত শান্তি নেই—সাধারণ মানুষ প্রতিটি বছরের জেরুজালেম দিবসে হামলার শিকার হয়।”
এক জন দোকানদার বলেন,
“এর আগেও বারবার একে–অপরের গায় থুতু ছিটিয়েছে, এবার আবার সেই অমানুষিক হামলা।”
স্থানীয়রা পুলিশের ভ্রূকুটি না তুলে নেওয়ায় আতঙ্ক তৈরির অভিঘাত অনুভব করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- প্যালেস্টাইনি অথরিটি কড়া নিন্দা করে প্রচারণামূলক উগ্রতার অভিযোগ করেছে।
- জর্ডান জানিয়েছে, বেন–গভিরের আগমন “রাজনৈতিক অচেতনতা” এবং “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় হুমকি”।
- জার্মানি বরাবরের মত পূর্ব জেরুজালেমকে “আদালত-অনুযায়ী অধিকৃত” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে হামলার নিন্দা জানায়।
- সংযুক্ত রাষ্ট্র আশা করে, “এই ধরনের প্ররোচনা বন্ধ হবে”—তারা ইউএনআরডব্লিউএ কর্মকাণ্ডের নিষেধকে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে।
এখনকার নিরাপত্তা অবস্থা
প্রতিবারের মতো এই বছরও সেটেলমেন্ট পুলিশ ও বর্ডার পুলিশ সহ হাজারাধিক নিরাপত্তা জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সিস্টেম্যাটিক মোবিলাইজেশন ছাড়াই হামলাকারীদের ছেড়ে দিয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ ফিলিস্তিনি প্রতিটি বছর জীবন–নির্বিঘ্ন চলাচল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
- ইসরায়েলের অভ্যন্তরীন রাজনীতি: ন্যাশনাল সিকিউরিটি মন্ত্রীর এই পদক্ষেপে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
- মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা: জেরুজালেম দিবসের হামলা গাজা–পশ্চিম তীর দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
- ভবিষ্যতের অস্থিরতা: ২০১৭–২০২১ সালের মিছিলের মতো, এই হামলাও নতুন সশস্ত্র সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
পবিত্র আল–আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুধু সাময়িক সহিংসতা নয়, বরং একটি দীর্ঘসময় ধরে গড়ে ওঠা সংকট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চিত্র। প্রতি বছর জেরুজালেম দিবসের মিছিল পূর্বজেরুজালেমে ফিলিস্তিনি অধিকার হরণ আর ইসরায়েলি আধিপত্য প্রদর্শনের এক জাতীয় অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে আল–আকসা পুরোমাত্রায় মুসলিম ওয়ার্ল্ডের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবেই স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা পেতে হবে।