বিশ্ব

নেতানিয়াহুরের কড়া অভিযোগ: ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্স হামাসের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই তিনটি দেশ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পশ্চিমা এই শক্তিধর দেশগুলো গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে হামলা বন্ধ ও অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তবে নেতানিয়াহুরের মতে, তারা আসলে হামাসকে রক্ষা ও ক্ষমতায় রাখতে চাইছে।

ঘটনার পটভূমি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বেড়ে গেছে। একের পর এক সংঘর্ষে নিহত ও আহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো—বিশেষ করে ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্স—ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে গাজায় হামলা বন্ধ এবং অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের বক্তব্য, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য ইসরাইলকে কড়াকড়ি কমাতে হবে এবং গাজার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে হবে।

তবে এই নীতিগত অবস্থানের প্রতিবাদ জানিয়ে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগে টুইটার) একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিন দেশের নেতাদের কঠোর ভাষায়批判 করেছেন।

নেতানিয়াহুরের ভিডিও বার্তার বিশ্লেষণ

ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু সরাসরি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নাম উল্লেখ করে বলেছেন, তারা ‘কার্যতঃ হামাসের পক্ষে’ অবস্থান নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তারা ‘গণহত্যাকারী, ধর্ষক, শিশুহত্যাকারী ও অপহরণকারীদের’ সমর্থন দিয়ে মানবতা ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চায়, ইহুদি জনগণকে নির্মূল করতে চায়। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি কেন ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা ও অন্য অনেক দেশ এই বাস্তবতা এড়িয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “যখন গণহত্যাকারী ও অপরাধীরা আপনাদের ধন্যবাদ দেয়, তখন বুঝতে হবে, আপনি মানবতার, ন্যায়ের ও ইতিহাসের ভুল পথে হাঁটছেন।”

পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান ও কারণ

ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীরা ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে ঘোরতর সমালোচনা করছেন। তারা গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করতে, অবরোধ শিথিল করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য রাজনৈতিক সমাধানের দাবি করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর এই অবস্থানের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে—

১. মানবিক উদ্বেগ: গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট। প্রচণ্ড অবরোধ ও সামরিক হামলায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
২. আন্তর্জাতিক নীতি: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করার প্রয়াস, যাতে ইসরাইলের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে তাদের নীতি ন্যায্যতা পায়।

তবে ইসরাইল এই সমালোচনাকে রাজনৈতিক চাপ ও এক ধরনের হামাসের পক্ষে অবস্থান হিসেবে দেখছে।

গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি

গাজা উপত্যকায় অবরোধ ও সামরিক অভিযানের কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, পানীয় জলসহ মৌলিক সেবাসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবিক সাহায্যের আহ্বান জানাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসরাইলকে দয়া প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে সামরিক সংঘর্ষ এখনো থামেনি।

বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

গাজা-ইসরাইল সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ সমাধানের আহ্বান জানালেও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের প্রতি সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ হামাসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়িয়েছে।

ব্রিটিশ সংসদেও গাজা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। কিছু সাংসদ ইসরাইলের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন, আবার কেউ কেউ নেতানিয়াহুরের বক্তব্যের সমর্থনে টুইট করেছেন।

নেতানিয়াহুরের বক্তব্যের পরের ধাপ

নেতানিয়াহুরের এই কঠোর অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ককে জটিল করতে পারে। বিশেষত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় এখন বেশ চাপ তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অবস্থার মধ্যে ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ আরও তীব্র হবে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মাঝে পশ্চিমা দেশগুলো যখন ইসরাইলের সামরিক অভিযান সমালোচনা করছে, তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাদের হামাসের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

ভবিষ্যতে এই দ্বন্দ্ব কিভাবে এগোবে তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও গাজার পরিস্থিতির উন্নতির উপর। তবে বর্তমান অবস্থায় স্পষ্ট যে, এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এখনও অনেক দূরে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button